কলকাতা: বাংলাদেশের খাবার কলকাতাবাসীর কাছে এখন আর নতুন নয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে কলকাতার মানুষ চেখে দেখেন ভুনা খিচুরি, কাচ্চি বিরিয়ানি, ভাপা পিঠে থেকে নানা রকমের স্বাদ।
কিন্তু বাংলাদেশের খাবার কলকাতার মানুষের কাছে শুধুই সুস্বাদু খাবার নয়। বাংলাদেশের খাবার মানেই অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতিকে ফিরে পাওয়া আর খাবারের উত্তাপের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তাপটিকে অনুভব করার আরও একটি সুযোগ।
তাই একদিকে যেমন আছে জিভে জল আনা স্বাদ আর অন্যদিকে আছে হৃদয় ভিজিয়ে দেওয়া আবেগ। এই দুইয়ের জন্যই যখন কলকাতায় বাংলাদেশের হেঁসেল থেকে কিছু পরিবেশিত হয় তখনই কলকাতার মানুষরা ভিড় জমান সেখানে।
কলকাতার বাগুইহাটির দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের খাবারের ভক্ত। কলকাতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খাবারের স্টলের একজন নিয়মিত ক্রেতা। কি আছে বাংলাদেশের খাবারে যার জন্য ডাইবেটিকসের রোগী বছর পঁচাত্তরের দীপক বাবু ছুটে আসেন? নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামের হিম ঝরা সন্ধ্যায় গঙ্গার হাওয়ার ওড়া পাতলা হয়ে যাওয়া চুল সামলে তিনি উত্তর দিলেন। ‘আসলে আমার মাকে ফিরে পাই’।
প্রশ্ন ভরা চোখের দৃষ্টিকে বুঝে তিনি হেসে বললেন, ‘মা গত হয়েছেন বহু বছর, তখন আমার বয়স ১২ বছর। মায়ের মুখটাও আজকাল স্পষ্ট মনে পড়ে না। তবে যশোরের গুড়ের পিঠে খেলে বুড়ো বয়েসের দুর্বল হওয়া স্মৃতিটা জেগে ওঠে। মনে পরে একটা অস্পষ্ট ছবি, উনুনের সামনে পিঠে বানাচ্ছেন এক মহিলা। গায়ে শাড়ি আর একটা ছেলে দাওয়ায় বসে অধীর অপেক্ষায় আছে কখন তার পাতে পড়বে গরম গরম পিঠে। সেই কারণে বারবার ফিরে আসা। জানি না পরের বছর আসতে পারব কিনা? সময়টা ক্রমেই কমে আসছে’। খাবার স্টলগুলিতে বারবার এই ধরণের আবেগ ঘুরে ফিরে আসছিল। আর সেটাই বোধহয় কলকাতাবাসীর কাছে বাংলাদেশের খাবারের আরও একটা আকর্ষণ।
নকশী পিঠা, পুলি পিঠা, ভাপা পিঠাসহ আরও নানা নামের পিঠা। শীতের মৌসুমে বিজয় উৎসবের আরেক রূপ পিঠা উৎসবের আকার নিয়েছে। বলা যায় বাংলাদেশের খাদ্য উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
ভিএস/এনটি/আরআই