ছিপছিপে চেহারার গোয়েন্দার কার্যকলাপ শিহরিত করতো। শুধু তাই নয় অনেকেই স্বপ্ন দেখতো জেমস বন্ড হওয়ার।
সেই সময় ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্ট বন্ডের চরিত্রে গোটা বিশ্বকে আন্দোলিত করে চলেছেন সদ্য প্রয়াত রজার মুর। তার তীক্ষ্ণ চাউনি, সূক্ষ্ম বুদ্ধি আর কল্পনার অতীত ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা মানুষটিকে কীভাবে যেন মাছ-ভাত খাওয়া বাঙালি আপন করে নিয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে আমার ও আমার বন্ধুদের মতো অনেকের কাছেই জেমস বন্ডের চলচ্চিত্র ছিল শুধু মাত্র ‘অ্যাকশন মুভি’। পরিস্থিতি বদলে গেলো যখন এক সিনিয়র দাদা বললেন জেমস বন্ড বুঝতে গেলে খুব ভালো করে পড়ে নেওয়া দরকার দু'টি বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস এবং অবশ্যই কিছুটা আন্তর্জাতিক রাজনীতি।
তারপর থেকে অনুভব করলাম আমাদের স্বপ্ন দেখান জলে এবং ডাঙ্গায় চলতে পারা গাড়ির মালিকটি শুধু কল্পনার গোয়েন্দা নন তার গড়ে ওঠার পেছনে আছে ইতিহাসের ছোঁয়া।
কোনো কোনো সমালোচক বলেন, জেমস বন্ড অনেক সময়েই ‘কোল্ড ওয়ার’ বিশেষ করে আমেরিকা এবং তার বন্ধু ‘ন্যাটো’ দেশসমূহের সঙ্গে রাশিয়ার ঠাণ্ডা যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য, জানতে না পারা সিক্রেট এজেন্টদের দুনিয়ার জেমস বন্ডই প্রথম শিখিয়েছিল কীভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকেন সিক্রেট এজেন্টরা।
যখন প্রথম জেনেছিলাম এহেন বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করা রজার মুর’ এর কলকাতার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে সেদিন কেন জানি একটু গর্ব অনুভব হয়েছিল।
রজার মুর ১৪ অক্টোবর ১৯২৭ সালে জন্মেছিলেন লন্ডনে। তার মা জন্মেছিলেন কলকাতার এক ব্রিটিশ পরিবারে। সেদিক থেকে কলকাতা ছিল রজার মুরের নানাবাড়ি।
জেমস বন্ডের চলচ্চিত্রেই আমরা প্রথম দেখেছিলাম অকুতোভয় বন্ড একদিকে যেমন শত্রুদের সাফ করেন অবলীলায়। অন্যদিকে প্রেমিক হিসেবেও তিনি চূড়ান্ত সফল।
আধুনিক ‘গ্যাজেট’ ব্যাবহারেও বন্ড ছিলেন সবথেকে এগিয়ে থাকা হলিউডি চরিত্র। গোপন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট দিয়ে যোগাযোগ করতে পারা যায় এমন ঘড়ি, লেজার রশ্মি বের হয় এমন কলম এবং একসাথে রকেট, মেশিনগান ও মিসাইল বহনকারী বিমান একাধিক প্রজন্মকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে ছোট বয়েসে অনেকেই শখ করে তাদের সাংকেতিক নাম রেখেছিলেন ‘০০৭’।
রজার মুর অনেক আগেই বন্ডের চরিত্র থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তবে বন্ড হিসেবে ভক্তদের মনে তিনি স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন সহজেই। তাই যখন খবর এসে পৌঁছালো ২৩ মে হঠাৎ করেই চলে গেছেন রজার মুর, তখন রাতের কলকাতার আকাশ কিছুটা বেশি অন্ধকার হয়ে উঠেছিল। মুহূর্তে একটা প্রজন্ম নস্টালজিক হয়ে পড়েছিল, যারা কখনও নিজের সাংকেতিক নাম রেখেছিল ‘০০৭’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
ভিএস/এএটি/আরআই