ফুটবল খেলার রিপোর্টে শিরোনাম হয় দল । কখনো খেলোয়াড় ।
দুঃখিত, অনেক ভেবেচিন্তেই এমন হেডলাইন । কিছুই করার ছিলোনা আমার ! গতরাতে হল্যান্ড-কোস্টারিকা'র কোয়ার্টার ফাইনালটা যারা দেখেছেন তারা বুঝে গেছেন এর সারমর্ম । অসাধারন এক খেলা । নখ কামড়ানিয়া । ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ! তবু গোল শুন্য ! পুরো ১২০মিনিট, সঙ্গে ইনজুরি টাইম । শেষমেশ টাইব্রেকার । হল্যান্ডের রুদ্ধ শ্বাস জয় । অতঃপর সেমি ফাইনাল যাত্রা ।
যারা ঘুমিয়ে ছিলেন কাল্ রাতে, খেলাটা দেখতে পারেননি বা দেখতে চাননি ...মিস করেছেন অনেক কিছু ।
এই খেলায় যদি ৫-৬ গোলেও জিততো হল্যান্ড- কম মনে হতো । কথাটা শুনে চমকে উঠলেন ? জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যারা খেলা দেখেছেন তাদের । গুনে গুনে চৌদ্দটা 'নিশ্চিত' গোল সেইভ করেছেন কোস্টারিকার গোলকিপার ! যার নাম কেইলর নাভাস । এই বিশ্বকাপে সেরা কিপার বলা হচ্ছে তাকেই এই ম্যাচের পর । হল্যান্ডের স্পিডমেশিন রোবেন বা রবিন,স্নেইডার-রা জীবনে বোধহয় এত শট নেননি কোনো দলের গোলপোস্টে । নিলেও গোল না পেয়ে বসে থাকেন নি । নাভাসের হাতে জমা হওয়া আর হাত-পায়ের আঘাতে নিশানা থেকে সরে যাওয়া আক্রমনগুলির সঙ্গে যোগ হয়েছিলো গোলপোস্টের সাইডবার ,ক্রসবার । কোস্টারিকার পক্ষে খেলেছে 'ওরা'ও । এক শুটারের বেলায় তো দুইবার ঘটেছে ক্রসবারে লেগে বল ফিরে আসার ঘটনা । দুর্ভাগা ডাচ স্ট্রাইকারের নাম ওয়েসলি স্নেইডার । গোলরক্ষককে পরাস্ত করেও সাইডবারে লেগে বল জালে না গিয়ে অন্যত্র চলে গেছে একাধিকবার ।
ফরোয়ার্ডে আরিয়েন রোবেনের পরিচালনায় রবিন ফন পার্সি, ডিপে, স্নেইডাররা যেভাবে কোস্টারিকার ডিফেন্স ভেঙে ঢুকে পড়ছিলেন আর শুট,হেড করছিলেন - একবারও কেউ ভেবেছিলো এই খেলায় ১২০ মিনিটেও গোল হবেনা ?
পোস্ট লক্ষ্য করে ১৫ বার জোরালো শট নেওয়া ডাচরা অফসাইডেও পড়েছে ১৩ বার । সহকারী রেফারির নেওয়া সবকটি অফ সাইডের সিদ্ধান্তই কি সঠিক ছিলো ?যদি না-ও হয়, নিজেদের টাইমিংয়ের ভুলে তেরোবার অফসাইডে না পড়লে অনেকগুলি গোলের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারতো । গোলের ভালো সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলো সেন্ট্রাল আমেরিকার দলটিও । তবে তা মাত্র দুই কি তিন বার ।
কোস্টারিকার গোলরক্ষক আর ডিফেন্ডাররা মিলে খেলাটাকে যখন টাইব্রেকার পর্যন্ত নিয়ে গেলেন - সে কি আনন্দ তাদের। গ্যালারিতে বিজয়োৎসব শুরু হয়ে গেল সমর্থকদের! হল্যান্ডের মতো দলকে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া কি বিরাট পাওয়া না ? পেনাল্টি শুট আউটেও তো বড় দল ছোট দল নেই । তবে গোলকিপার যাদের বেটার ,জেতার সম্ভাবনা তাদের একটু হলেও বেশি । এই বিচারে তো কোস্টারিকাই এগিয়ে। সমর্থকদের বাড়তি খুশির এটা ছিলো আরেক কারণ।
ওদিকে যা সচরাচর দেখা যায় না ,শোনাও যায়না এমন এক কান্ড করলেন হল্যান্ডের কোচ-ম্যানেজার লুইস ফন গাল । খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে গোলকিপার পালটে ফেললেন । টিম ক্রুল নামের বদলি গোলরক্ষককে মাঠে নামালেন মুলতঃ টাইব্রেকারের ঝড় সামলাতে । ভাগ্য ভালোই বলতে হবে কোচের । দলের অতিরিক্ত গোলকিপারই জিতিয়ে দিলেন দল ,দুই পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়ে ।
অন্যদিকে, পেনাল্টি রাউন্ডে নেদারল্যান্ডসের দুর্দান্ত শটগুলি রুখতে না পারলেও সারা খেলায় অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা দেখানো নাভাসই ঘোষিত হলেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় । যাকে দেখতে লাগে বাংলাদেশের অনেকের মতো । গোলপোস্টের নিচে ওর চুপচাপ ,ভাবলেশহীন চেহারাটা দেখলে মনে হবে সারা পৃথিবীর সামনে খেলছেন না তিনি - খেলতে নেমেছেন তার ঘরের উঠানে বা পাড়ার মাঠে !
বাংলাদেশের আধুনিক স্পোর্টস সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মনে করা হয় তাকে। বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিয়লে থাকেন। তবে এখনও স্পোর্টস এবং লেখালেখি তার হ্রদস্পন্দনের সাথেই যেনো মিশে আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আয়োজনে ফরহাদ টিটো লিখছেন বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪
** ছন্দে ফিরেছে ব্রাজিল
** নাম তার নেইমার
** দুঃখিত, আবারও শিরোনাম 'মেসি'!
** মেসি'র গোল... আর্জেন্টিনার জয়?
** ছয় মিনিটের ঝড়ে মেক্সিকো শেষ!
** জয়টাই বড় কথা
** হারলেই সব শেষ !
** চাপে নেই আর্জেন্টিনা, তবে...
** নেইমার... নেইমার! ক্যামেরুন ছারখার
** আবারও শেষ মুহূর্তের গোল!
** মেসি-ই পারেন !
** আজ আর্জেন্টিনার জ্বলে ওঠার দিন
** ওচোয়া-বিদ্ধ ব্রাজিল !
** নিজের খোঁড়া কবরেই সমাধি বাংলাদেশের!
** আবার ব্রাজিল, আবারো বাংলাদেশ
** লিওনেল মেসি, ম্যান উইথ অ্যা প্ল্যান
** দিনে সাকিব রাতে মেসি
** দোস সান্তোসের দুঃসহ দিন
** নেইমার-ওস্কার শো
** বত্রিশের চক্করে বিশ্বকাপ
** বিশ্বকাপে বাংলানিউজে লিখছেন ফরহাদ টিটো