ঢাকা: কথা ছিলো নিজ দেশে বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে তিনি কাঁদাবেন শিরোপা জয়ের আনন্দে। কাঁদাবেন প্রতিটি ব্রাজিল সমর্থককে।
আর তাই তো নেইমার এখন বাস্তবে রূপকথারই নায়ক!
কলম্বিয়ার হুয়ান জুনিগারের দেওয়া আঘাতে পোস্টার বয় নেইমার যখন মেরুদণ্ডের কশেরুকায় চিড় নিয়ে মাঠে লুটিয়ে ব্যথায় কাঁদছিলেন; তার কান্নার জল যখন স্টেডিয়ামের দুর্বা ঘাসে এসে গড়াচ্ছিলো, তখন প্রতিটি ব্রাজিল সমর্থককে ছাপিয়ে প্রকৃত ফুটবল প্রেমীর হৃদয়ে ক্ষরণ হচ্ছিলো।
কলম্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচে ২০তম বিশ্বকাপের সেরা ছন্দ দেখিয়েছে সাম্বার দেশের ফুটবলাররা। এ ম্যাচে ব্রাজিল সেরা ছন্দে ফিরলে কি হবে, বিশ্বকাপটাই যে শেষ হয়ে গেছে দলের প্রাণভোমরা ও আধুনিক ফুটবলের জনক নেইমারের।
তারুণ্যের উদ্দীপনায় সিক্ত মহাপ্রাণ নেইমার যে কতোটা ধারাবাহিক তার প্রমাণ তিনি রেখেছেন আসরের প্রথম ম্যাচ থেকে দলের জন্য নিজের পুরো সামর্থ ঢেলে দিয়ে। নেইমার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ২ গোল, ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ২ গোল করেছেন।
সেই নেইমার দাফিয়ে বেড়াতে পারবেন না জার্মানির সঙ্গে ম্যাচে। দল জিতলে ফাইনালে খেলার সুযোগটুকুও অনিশ্চিত।
যে নেইমারকে ঘিরে ব্রাজিলের ভরসা সেই নেইমার মাঠে নন, আছেন বেড রেস্টে! দলের এমন গুরুদায়িত্বের সময় প্রিয় তারকাকে না পেয়ে ব্যথিত বাবা সমতুল্য কোচ লুইস স্কলারিও। সেই সঙ্গে ব্যথিত পুরো বিশ্ব। পুরো দুনিয়ার ফুটবল প্রেমীরা।
নেইমারের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় দুঃখ ভর করেছে তার বান্ধবী গ্যাব্রিয়েলা লেনজির মনেও। দুঃখ নেইমারের সাবেক বান্ধবী ব্রাজিলীয়য় অভিনেত্রী ব্রুনা মারকেজিনেরও কম নয়।
আর সারা বিশ্বের ব্রাজিল সমর্থকরা তো মেনে নিতেই পারছেন না নেইমার নেই। কি ভাবে বিশ্বকাপের মাঝপথে বাস্তবের নায়ক নেইমার রূপকথার নায়ক হয়ে যাবেন এ ভাবনাটুকু দুঃস্বপ্নেও কি ভেবেছিলেন কেউ!
ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরুর আগে পেলে বলেছিলেন, 'শুধু ক্লাব ফুটবল মাতিয়েই কিংবদন্তির কাতারে নাম লেখানো যায় না। তাই যদি হতো তাহলে আমার নাম কেউ অন্যদের থেকে আলাদা করে দেখতেন না। দেশকে বিশ্বকাপের শিরোপা উপহার দিয়েই আমি পেয়েছি সর্বকালের সেরার স্বীকৃতি। এখন আমার কাতারে গিয়ে দাঁড়াবেন নেইমারও!'
আসলেই অবাক করার মতো কথা হলেও পেলে নিজেই কিন্তু স্বদেশি সেনসেশনকে দেখছেন নিজেদের কাতারে।
তার মতে, 'নেইমার বিশ্বকাপ জিতে বিশ্বসেরা ফুটবলারদের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে। '
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। জানতেন কি পেলে বিশ্বকাপে ব্রাজিল টিকলেও টিকবেন না পোস্টার বয় নেইমার। সবাইকে অশ্রু জলে ভিজিয়ে বিদায় নেবেন তিনি। এ যে অকল্পনীয় এক ইতিকথা। তবে বাস্তবে সবাইকে কাঁদিয়ে ঘটলো যে তাই!
এদিকে নেইমারকে আঘাত করা কলম্বিয়ার জুনিগা বলছেন, তিনি নেইমারকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করেননি। মাঠে দেশের হয়ে লড়াই করতে গিয়ে এমনটা হয়ে গেছে। প্রচণ্ড শক্ত ম্যাচ ছিলো। ম্যাচটি জিততে চেয়েছিলো কলম্বিয়া।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নিশ্চয়ই নেইমারের চোট গুরুতর নয়। নিশ্চয়ই ফাইনাল ম্যাচটা অন্তত নেইমার মাঠে নামুক। নেইমার ব্রাজিল ও ফুটবল বিশ্বের দুরন্ত প্রতিভা। ও যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে তার জন্য প্রার্থনা রইলো।
তবে যতই অনুশোচনা এখন হোক, নেইমার এখন সত্যিই রূপকথার নায়ক ছাড়া আর কিছুই নন! আর এটাই বর্তমান সময়ের রূঢ় বাস্তবতা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৪