দায়িত্ব পাওয়ার আড়াই বছর পর বরখাস্ত হলেন পিএসজির কোচ টমাস টুখেল। অথচ এর কয়েক ঘণ্টা আগেই শেষ দিকের ১২ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল দিয়ে স্ত্রাসবুরকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে ফরাসি জায়ান্টরা।
চলতি মৌসুমে দলের অধারাবাহিক পারফরম্যান্স, ফ্রেঞ্চ লিগে তৃতীয় স্থানে অবস্থান এবং ক্লাবের কাতারি মালিকপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণেই চাকরি হারালেন টুখেল। জার্মান সংবাদমাধ্যম 'বিল্ড' অন্তত এমনটাই দাবি করেছে।
এখনও অবশ্য পিএসজির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। তবে 'বিল্ড' দাবি করেছে, স্ত্রাসবুরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বিশাল জয় পাওয়ার টুখেলকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাঁটাই করার পর দুই পক্ষ এখন ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা ঠিক করতে বসছে। সেটা নির্ধারিত হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
অবশ্য ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ক্লাবের দুই মহাতারকা নেইমার ও এমবাপ্পেকে নিয়ে মজা করার কারণেই বিপাকে পড়েছেন জার্মান কোচ। গতকাল ম্যাচের আগ মুহূর্তে এক সাক্ষাৎকারে টুখেল নাকি মজার ছলেই বলেছিলেন, নেইমার ও এমবাপ্পের মতো খেলোয়াড়কে সামলানো কঠিন। তাদের খুশি রাখা এবং চাহিদা পূরণ করাও কঠিন কাজ। তার মতে, পিএসজি জিতলে নাম হয় আনহেল দি মারিয়া, নেইমার কিংবা এববাপ্পের। কিন্তু দলের বাকিদের কঠোর পরিশ্রম সবার চোখ এড়িয়ে যায়।
স্পোর্টস ওয়ান'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৪৭ বছর বয়সী টুখেল আরও বলেন, নিজেকে নাকি তার ইদানীং ক্রীড়ামন্ত্রী বা রাজনীতিবিদ বলে মনে হয়। গত চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে দলকে ফাইনালে তোলার পরেও ক্লাব তাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করেনি বলে দাবি করেন তিনি। তার এসব মন্তব্য ক্লাবের পছন্দ হয়নি। যদিও টুখেল দাবি করেছেন তার কথার ভুল মানে করা হয়েছে। কিন্তু তার সেই দাবি সম্ভবত ধোপে টেকেনি।
পিএসজির কাতারি প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্যই কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে নেইমার-এমবাপ্পের মতো দামি খেলোয়াড়দের কিনেছিলেন। গত আসরের ফাইনালে উঠে সেই উদ্দেশ্য প্রায় পূরণ করেই ফেলেছিল টুখেলের দল। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের কাছে পেরে ওঠেননি নেইমাররা। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় অর্থাৎ ঘরোয়া ফুটবলের শিরোপা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল, টুখেলের অধীনে পিএসজির সাফল্য বেশ ভালোই বলতে হবে।
কিন্তু নতুন মৌসুমে আগের চিত্র পাল্টে গেছে। লিগ ওয়ানের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচ খেলে ১১ জয়, ২ ড্র এবং ৪ হারে পয়েন্ট তালিকার তিনে নেমে গেছে পিএসজি। যদিও শীর্ষে থাকা লিঁওর সঙ্গে তাদের পয়েন্টের পার্থক্য মাত্র ১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিলের পয়েন্ট আবার পিএসজির সমান। তবে গোল পার্থক্যের কারণে পিছিয়ে পিএসজি। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের অবস্থান বেশ নড়বড়ে হয়ে গেছে। এসব কারণ ছাড়াও ক্লাবের পরিচালকদের সঙ্গেও টুখেলের সম্পর্ক ভালো নয়।
মৌসুমের মাঝে বিদায় নিলেও পিএসজির সাফল্যগাঁথা লিখতে বসলে টুখেলের নাম আসবেই। তার অধীনেই ৬টি ঘরোয়া শিরোপা জিতেছে প্যারিসের ক্লাবটি। এছাড়া ক্লাবের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠার কীর্তি তো আছেই। গত মৌসুমে পিএসজি লিগ ওয়ানসহ ঘরোয়া তিনটি শিরোপাই ঘরে তুলেছিল। বায়ার্নের কাছে ফাইনালে না হারলে গত মৌসুমে সবচেয়ে সফল ক্লাব হিসেবেই উচ্চারিত হতো তাদের নাম।
টুখেলের বিদায়ের পর এখন জানুয়ারির শুরুর দিকেই নতুন কোচ নিয়োগ দেবে পিএসজি। সম্ভাব্যদের তালিকায় সবার উপরে আছেন পিএসজিরই সাবেক খেলোয়াড় মাওরিসিও পচেত্তিনো। টটেনহামের চাকরি হারানোর পর এখন পর্যন্ত নতুন কোথাও জয়েন করেননি তিনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু রিয়ালের বর্তমান কোচ জিনেদিন জিদান সেই সম্ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
পচেত্তিনো ছাড়াও উঠে আসছে মাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির নাম। শোনা যাচ্ছে, পিএসজির পরিচালক লিওনার্দোর প্রথম পছন্দ এই ইতালিয়ান কোচ। তবে পচেত্তিনোর সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
এমএইচএম