ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেল

ঢাকা: দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত সানজিদা আক্তারের (৩০) ‘মাল্টি অর্গান ফেইলর’- এর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।  

একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া, অসুস্থ বোধ করলে ঘরে থাকা - এ বিষয়গুলো মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএমপি ভাইরাসে একজনের মৃত্যুর বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসের বিস্তার আগে থেকেই ছিল। সানজিদা আক্তার প্রথমে বাসার আশপাশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে একমাস পর তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। তাকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। আরো চারদিন পর তার আরেকটু অবনতি হয়। এরপর তাকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, তার এইচএমপি ভাইরাস পজেটিভ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাল্টি অর্গান ফেইলরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তার নিউমোনিয়া ডেভেলপ করেছিল। শরীরে একটি ভাইরাস ও একটি ব্যাকটেরিয়া ছিল।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান যেটুকু বলেছে, এইচএমপিভির কারণে মৃত্যু বিরল। তবে এইচএমপিভি ব্যক্তি যদি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে অল্প বয়সী শিশু ৫ বছরের নিচে এবং বেশি বয়সী মানুষ ৬৫ বছরের উপরে, সিওপিডি অ্যাজমা থাকে- তাদের কিছুটা ঝুঁকি থাকে।

মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ সবসময়ই এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত থাকে। তবে এইচএমপিভি কখনোই সাধারণভাবে মৃত্যুর কারণ হয় না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় একজন এইচএমপিভি রোগী মারা গেছেন। তাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল এবং উন্নতির কারণে তাকে আবার ভেন্টিলেশন থেকে ফিরিয়ে আনাও হয়েছিল। এরপর আবার অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুর কারণে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।  

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান এইচএমপিভির কারণে সরাসরি মৃত্যু হওয়ার কথা বলা হয়নি। এটিতে মৃত্যুর হার খুবই কম। এক হাজারে একজন বলা হয় তবে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তাও না।

তিনি বলেন, সিজনাল ফ্লু'র লক্ষণ আর এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ একই। সাধারণ ফ্লু ও এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় কোনো পার্থক্য নেই। এজন্য আমরা মানুষকে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিই। মানুষের ভিড়ের মধ্যে গেলে মাস্ক পরবেন। অসুস্থ বোধ করলে ঘরে থাকুন। সাধারণ এ বিষয়গুলো মেনে চললে এ ভাইরাসের বিস্তার কমবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজ্ঞান পরবর্তীতে নির্ধারণ করবে এই ধরনের মৃত্যুগুলোকে কীভাবে ক্যাটাগোরাইজ করা হবে। এইচএমপিভি-তে মৃত্যুর কোনো ক্যাটাগরি এখন পর্যন্ত করা হয়নি।  

এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গবেষণাধীন দু-একটি ভ্যাকসিনের কথা শোনা যায়। ভ্যাকসিন আকারে আসার সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ পৃথিবীর কোনো দেশেই এখন পর্যন্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি।

বিশেষ এই সহকারী বলেন, ভাইরাস যখন ছড়ায় তখন এটি মিউটেশন হতে থাকে। বেশি বেশি ছড়ালে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। চেষ্টা করতে হবে সার্কুলেশনটা যাতে কম হয়।  

এ বিষয়ে সরকারের কি অতিরিক্ত প্রস্তুতি রয়েছে - প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এটি শ্বসনতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং এটি অক্সিজেনের চাহিদা বাড়াচ্ছে। করোনার সময় আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল সেগুলোকে পুনর্বিন্যাস করলেই আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রস্তুতি হলো অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা। সে প্রস্তুতি আমাদের দেশের ৩০টি জেলায় রয়েছে। চৌত্রিশটি জেলায় আমরা সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা মনে করি না যে, এই জিনিসগুলো এই মুহূর্তে প্রয়োজন হবে। তবে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাতে আমরা দ্রুত সাড়া দিতে পারি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। এইচএমপিভির লক্ষণগুলো হলো - জ্বর, সর্দি কাশি, গা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পরা ইত্যাদি।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে চীনে প্রথম এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। ভাইরাসটিকে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ভাইরাসের কারণে সাধারণত ঠান্ডা জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শীতের মৌসুমে ভাইরাসটি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে এর দ্রুত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এইচএমপিভি আক্রান্ত সানজিদা আক্তারের (৩০) মৃত্যু হয়।  

বিষয়টি বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার জানান, ওই নারী বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান। তবে তিনি যে শুধু এইচএমপি ভাইরাসের জন্যই মারা গেছেন, এটা বলা যাচ্ছে না। ওনার অন্য আরও শারীরিক জটিলতা ছিল, যার জন্য হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

এর আগে শনিবার (১১ জানুয়ারি) ওই নারীর দেহে এইচএমপিভি সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি এইচএমপিভিতে আক্রান্তের পাশাপাশি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে এইচএমপিভিতে প্রথম আক্রান্ত নারীর মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
জিসিজি/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।