হারাম মানে অকল্যাণকর- শুধু এতটুকু মনে রাখলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে য
আল্লাহতায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি বান্দাদের প্রতি অপরিসীম দয়াবান।
আর এ বিষয়টিকে সামনে রেখে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্যে কেবল পাক-পবিত্র, উত্তম-উৎকৃষ্ট জিনিস হালাল করেছেন এবং হারাম করেছেন যাবতীয় নিকৃষ্ট-নষ্ট-খারাপ-ক্ষতিকর দ্রব্যাদি।
বস্তুত যা খুব বেশি ও সম্পূর্ণ ক্ষতিকর তার উপকারের তুলনায় তাকেই হারাম ঘোষণা করেছে ইসলাম।
আর যা উপকারী ও কল্যাণকর তা হালালে। যেমন মদ ও জুয়া প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! লোকেরা তোমার কাছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, ও দু’টোতে বড় গোনাহ রয়েছে, যদিও ফায়দাও কিছু রয়েছে। আর ও দু’টো কল্যাণের তুলনায় ক্ষতিই অনেক বেশি। ’ -সূরা বাকারা: ২১৯
এ আয়াতের প্রেক্ষিতে বলা যায়, ইসলামে হালাল কি? যখনই এরূপ প্রশ্ন করা হবে- তখনই বলা যাবে পাক-পবিত্র, কল্যাণকর দ্রব্যাদি অর্থাৎ সুস্থ মানব মন যেসব জিনিস ভালো ও উত্তম মনে করে এবং কোনোরূপ অভ্যাসের বশবর্তী না হয়ে সব মানুষ মোটামুটিভাবে তা পছন্দ করে- তাই হালাল।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তাদের জন্যে কি কি হালাল করা হয়েছে। হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে সে সব জিনিস- যা পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও উত্তম-উৎকৃষ্ট।
কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্যে হালাল করে দেওয়া হয়েছে সেসব জিনিস, যা পাক-পবিত্র, পরিচ্ছন্ন, উৎকৃষ্ট ও ভালো।
যে সব কারণে আল্লাহতায়ালা কোনো জিনিসকে হারাম ঘোষণা করেছেন, তা হচ্ছে সে জিনিসের নিকৃষ্টতা ও ক্ষতিকারতা। আর তা সব মুসলমানকেই বিস্তারিতভাবে জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কেননা সেসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান সমানভাবে সকলেরই থাকে না। হয়ত কেউ কেউ জানতে পারে আর অনেকেরই তা অজানা থেকে যায়। অনেক সময় একটি জিনিসের দোষ ও নিকৃষ্টতা হয়ত এখনও প্রকাশিত হয়নি, পরবর্তীকালে তা অবশ্যই জানা যাবে। এ অবস্থায় ঈমানদার ব্যক্তিমাত্রেরই কর্তব্য আল্লাহর ঘোষণাকে মেনে নেওয়া।
আল্লাহতায়ালা শূকর হারাম করেছেন। মুসলিমরা শুধু এতটুকুই বুঝতে পারল যে, তা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও খারাপ বলে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানেরও অগ্রগতি ঘটে। ফলে জানা গেল, শূকরে এক প্রকার ধ্বংসাত্মক ও মানব হত্যাকারী বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে। কিন্তু শূকর সংক্রান্ত এ জ্ঞান যদি নাও জানা যেত কিংবা এর চাইতে ভিন্নতর কিছুও জানা যেত তাহলেও মুসলিমদের বিশ্বাস কখনও পরিবর্তন হতো না। কেননা আল্লাহর ঘোষণায় তা নাপাক ও অত্যন্ত খারাপ।
উদাহরণস্বরূপ বলে যেতে পারে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিনটি অভিশাপ আহ্বানকারী জিনিস থেকে তোমরা দূরে থাকো। তা হচ্ছে- পানি পানের স্থানে, রাস্তার মাঝখানে ও ছায়াচ্ছন্ন স্থানে পায়খানা করা। -আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ
প্রাথমিককালে এ কথাটির তাৎপর্য শুধু এতটুকুই বোঝা গিয়েছিল যে, এ তিনটি স্থানে পায়খানা করা খুবই খারাপ কাজ। ভদ্রতা, শুচিতা ও সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির পরিপন্থী। কিন্তু বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিকাশের ফলে উত্তরকালে আমরা জানতে পারলাম, এ কাজটি সাধারণ স্বাস্থ্যনীতির দৃষ্টিতে অত্যন্ত ক্ষতিকর। কেননা এ কাজের ফলে মারাত্মক ধরণের সংক্রামক রোগ ছড়ায়।
এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতই বিকাশ ও অগ্রগতি সাধিত হবে, ইসলামি শরিয়তের বিধান রচনার মূলে নিহিত কারণ ও কল্যাণ-দৃষ্টি ততই বেশি উদ্ঘাটিত হতে থাকবে।
হালাল মানে কল্যাণকর, হারাম মানে অকল্যাণকর- শুধু এতটুকু মনে রাখলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২৩