মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা এবং প্রফুল্লতা-অস্থিরতা যেন হাত ধরাধরি করে চলে। অনুভূতির এই বৈচিত্র্য জীবনকে আরও সুন্দর ও উপভোগ্য করে তোলে।
যদি বান্দা সব অবস্থায় আল্লাহর ওপরই ভরসা রাখতে পারে। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে মানসিক অস্থিরতা কাটানোর কিছু আমল তুলে ধরা হলো—
দোয়া : দোয়ার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়ে যায়। মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।
পবিত্র কোরআনে দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) কাছেই, আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই; সুতরাং তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
এ জন্য মুমিনের উচিত, অস্থিরতা অনুভূত হলে আল্লাহর কাছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করা। আমাদের নবীজিও (সা.) অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়া করতেন— ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজানি, ওয়াল আজাজি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজালি। ’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের নিপীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪২৫)
ইখলাস : মানসিক শান্তি লাভের অন্যতম একটি রহস্য হলো ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। মানুষ বেশি অস্থিরতা অনুভব করে অন্যের অকৃতজ্ঞা দেখে। তার অবদানের অবমাননা দেখে। কিন্তু যখন সে একমাত্র আল্লাহর জন্য সব কাজ করে, মাখলুকের কাছে তার কোনো বিনিময় আশা করে না, তখন তার অস্থিরতা অনেকাংশে কমে যায়। কারণ সে কাজটি করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, এর উত্তম প্রতিদান মহান আল্লাহই দেবেন।
আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে চিন্তা করা : মানুষ প্রতিটি মাইক্রো সেকেন্ডে মহান আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করে। আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতে ডুবে থাকে। হিসাব করে দেখলে বোঝা যায় আমাদের ওপর আগত দুঃখ-কষ্ট থেকে আমাদের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের সংখ্যা বহু গুণ বেশি। সমস্যাগুলোর চেয়ে নিয়ামতগুলো নিয়ে চিন্তা করে অস্থিরতার শোকরিয়া বেশি আসবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তিনি তোমাদের সেসব কিছুই দিয়েছেন, যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই জালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৪)
আল্লাহর ওপর ভরসা করা : আল্লাহর ওপর আস্থা ও ভরসা অস্থিরতা কাটাতে কার্যকর। কারণ যার সঙ্গে আল্লাহ আছেন, পৃথিবীর কোনো কিছু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.) যখন অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ হন, তখন তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক। ’ মহান আল্লাহ তাঁর জন্য উত্তপ্ত আগুনকে শীতল করে দিয়েছিলেন, এমনি ভাবে সাহাবায়ে কেরামকে যখন আবু সুফিয়ানের বাহিনীর ভয় দেখানো হলো, তখন তাঁরাও এই বাক্যে আল্লাহর ওপর আস্থার সাক্ষী দেন, মহান আল্লাহ তাঁদেরও সাহায্য করেছিলেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “যাদের মানুষ বলেছিল যে ‘নিশ্চয়ই লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদের ভয় করো। ’ কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক!’ অতঃপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এলো, কোনো প্রকার অনিষ্ট তাদের স্পর্শ করেনি, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল এবং আল্লাহ মহাকল্যাণময়। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৩-১৭৪)
ধৈর্য ধরা : যারা ধৈর্য ধরে আল্লাহর সাহায্য চায়, মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন, ফলে তাদের অস্থির হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আমার সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
নেক আমল করা : নেক আমলের মাধ্যমে উত্তম জীবন লাভ করা যায়। জীবনে কল্যাণ আসে। তাই মুমিনের উচিত, অস্থিরতায় নেক আমলে মনোযোগী হওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব। ’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ৯৭)
নেক আমলগুলো হতে পারে জিকির, তিলাওয়াত, দরুদ, নফল নামাজ, ইস্তেগফার, সদকা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩
এইচএ/