বর্তমানে আমরা কোনো রুহানি চিকিৎসকের কাছে যাই না। অথচ অন্যদিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, চোখে বা কানে সামান্য কষ্ট অনুভব হলে তত্ক্ষণাৎ ডাক্তারের কাছে যাই।
এতটুকুতেই ক্ষান্ত হই না। বরং যদি এ ব্যাপারে আরো ভালো কোনো ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া যায়, শত কষ্ট-ক্লেশ করে সেখানে পৌঁছে যাই এবং তার জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করি। এত চেষ্টা সত্ত্বেও অনেকে আরোগ্য লাভ করে না। আবার অনেকে এর বিপরীতে আল্লাহওয়ালাদের কাছে বলতে গেলে যাই না।
যেখানে কোনো খরচ হয় না। রুহানি চিকিৎসকরা তো এটাই বলেন যে তোমরা পরিপূর্ণ মুমিন হও এবং আল্লাহর একজন খাঁটি বান্দা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলো। গুনাহ পরিত্যাগ করো, সেখানে শুধু এটাই নসিহত। আজ আমরা গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
গুনাহ পরিত্যাগ করা আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আল্লাহর আনুগত্যের তো ধার ধারি না। এমনকি একই সঙ্গে দুই গুনাহে লিপ্ত হয়ে আছি। আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে গাফিলতি এবং গুনাহে লিপ্ততা উভয়টিই অন্যায়। হে প্রিয়! কিছু সময় বের করো এবং কোনো আল্লাহওয়ালার কাছে যাও।
তার উপদেশমালার ওপর আশা করো। যদি তোমরা এমনটি করো, তাহলে তোমাদের ইসলাহ হয়ে যাবে। আমি-আপনি কী? কত বড় বড় লোক এই পথে চলে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
নিজেকে বড় মনে করা ধ্বংসাত্মক কাজ। কিছু লোক নিজেকে বড় মনে করে। নিজেকে বড় আলেম ও যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ভাবা এবং স্বীয় ধারণা অনুপাতে নিজেকে ইসলাহে বাতেনের থেকে ঊর্ধ্বে জ্ঞান করে—এমন লোক সদা সর্বদা বঞ্চিত ও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অনেক অভিজ্ঞতার আলোকে কথাগুলো বলছি। কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে তার জ্ঞান অপূর্ণ। তার কাছে কিতাবি ইলম আছে, কিন্তু এ ইলমের ওজন নেই। আখেরাতে তা মোটেই কাজে আসবে না।
আল্লাহ তাআলার কাছে তো এমন ইলমের কোনো সুফল পাওয়া যায় না। যে যত ইলম অর্জন করেছে, অথচ সেই মোতাবেক আমল বা ইখলাস নেই, তাহলে তা মকবুলও হয় না। পৃথিবীর মানুষ কেউ এমন বলতে পারবে না যে তার ইলমই শুধু আল্লাহর কাছে মাকবুল। কেননা আল্লাহর কাছে কে মাকবুল, আর কে গায়রে মাকবুল—তার জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই আছে। এ জন্য মুমিনদের আদেশ করা হয়েছে যে তোমরা একে অন্যকে ছোট মনে কোরো না। বরং প্রত্যেকে অন্য ভাই সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করো যে সে তো আমার চেয়ে উত্তম। যদি সবাই স্বীয় দিল ও দেমাগে এ কথা বদ্ধমূল করে নিই, তাহলে তো যথেষ্ট হয়ে যেত। এতে আত্মশুদ্ধিও সহজ হয়ে যেত, আর যেথায় তার বিপরীত হবে, সেথায়ই মানুষের পদস্খলন হবে। নিজেকে বড় আর অন্যকে ছোট ভাবা এটিও পাপ। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে যে অন্তরের গোপনীয় খবর তো একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।
লেখক: শিক্ষক, দারুল আরকাম, টঙ্গী, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
এসআইএ