নতুন বছরে আমাদের অতিপরিচিত অভিবাদন- হ্যাপি নিউইয়ার কিংবা শুভ নববর্ষ। নতুন বছরটি ভালো কাটুক, বছরের প্রতিটি দিন সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠুক, আমরা এমনটি চাই; নিজের জন্যেও চাই।
প্রতিযোগিতামূখর এ পৃথিবীতে সবাই স্বীকার করবেন, জীবনে এগিয়ে যেতে হলে পেছনের ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সামনের দিনগুলোতে সেগুলো শুধরে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
অতীতের ভুল থেকে যদি কেউ শিক্ষা না নেয় তাহলে ব্যর্থতার গ্রাস থেকে মুক্তির কোনো পথ তার নেই। এ কথা একান্ত ব্যক্তিজীবনে যেমন সত্য, তেমনি সত্য ব্যক্তিজীবনের গণ্ডি পেরিয়ে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলেও।
একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে, আগের চেয়ে আরও ভালো করতে চাইলে এ কথা তাকে মনে রাখতেই হবে, বিগত পরীক্ষাগুলোতে সে কী কী ভুল করেছে, কোনো বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত নম্বর পায়নি, পরীক্ষার খাতায় লিখতে গিয়ে কোনো সংকটের মুখোমুখি সে হয়েছে কি না ইত্যাদি। সামনের পরীক্ষাগুলোতে ভালো করতে হলে এসব বিষয় চিহ্নিত করে সংশোধন করে নিতে হবে। প্রতিটি ঘরে কয়েকজন সদস্যের সম্মিলনে যেমন একটি পরিবার গড়ে ওঠে, তেমনি পরিবারের রূপ নেয় মানুষের প্রতিটি কর্মক্ষেত্র, আবাসিক হোস্টেল, গণপরিবহন ইত্যাদি।
মানুষ হিসেবে আমাদের অন্যের সঙ্গে ওঠাবসা, কথাবার্তা, লেনদেনে আমাদের জড়াতেই হয়। যেকোনো ক্ষেত্রে কেউ আজ যদি একটি ভুল আচরণ করে বসে, কিন্তু পরে সে নিজেকে সংশোধন করে নেয় এবং ওই ভুলটি যেন আর না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকে, তাহলে তার পরের দিনটি শুভ হবে, পরের বছরটি শুভ হবে। নিজ পরিবারে যেমন সে সবার প্রিয় হয়ে থাকবে, তেমনি পরিবারের বাইরেও সে হবে ঈর্ষণীয় সহকর্মী ও বন্ধু প্রভৃতি।
বিক্রেতার আকর্ষণীয় কথায় প্রভাবিত হয়ে কেউ যখন একদিন প্রতারিত হয়, আর পরে সে সতর্ক হয়ে ওঠে। তাহলে তাকে ভবিষ্যতে আর প্রতারিত হতে হয় না। কিন্তু এ সতর্কতার পথে যদি কেউ না চলে তাহলে বারবার সে প্রতারিত হতেই থাকবে। এ থেকে তার মুক্তি নেই। নতুন বছর যখন আসে আমরা তখন নানাভাবে এসব কথাবার্তা বলি।
‘পুরনো বছরের দুঃখ-দুর্দশার পরিবর্তে সুখ-শান্তিতে পূর্ণ হোক নতুন বছর,’ ‘বিগত বছরের ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সামনের পানে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়’ ইত্যাদি।
একটা সময় নববর্ষ উপলক্ষে কার্ড আদান-প্রদানের প্রচলন ছিল। সেই কার্ডে লেখা থাকত এসব। অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম সহজলভ্য হয়ে ওঠায় কার্ডের প্রচলন এখন নেই বললেই চলে। অনলাইনের শুভেচ্ছা-মেসেজগুলোতে এসব বাণী দেখা যায়। কিন্তু কথা হলো, আমরা কি আসলেই এসব বাণী মনে ধারণ করি? বাস্তবেই কি আমরা পেছনের ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে এসে সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি? যদি এমনটা করতে পারি, তাহলেই স্বার্থক হয়ে ওঠবে আমাদের এসব শুভেচ্ছা।
আর এটা তো শুধু নতুন বছরের প্রথম দিনের বিষয়ও নয়। কেউ যদি সামনে অগ্রসর হতে চায়, তাহলে পুরো বছরে একবার নয়, বরং বছরের প্রতিটি দিনই তাকে ভাবতে হবে পেছনের ভুলত্রুটি আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। গতকালের ভুলগুলো থেকে আজকে বেরিয়ে আসতেই হবে। নিজের লক্ষ্যের দিকে গতকালের চেয়ে আজ অধিক গতিশীল হতেই হবে। প্রতিটি দিন যার এভাবে কাটে, তার জীবনের প্রতিটি দিনই নববর্ষের মতো আনন্দঘন হয়, সাফল্যে উজ্জ্বল হয়। বছরজুড়ে নানামুখি শুভেচ্ছায় সে সিক্ত হয়। কিন্তু তা না হলে তো কারও, ‘উইশ’ কিংবা ‘শুভেচ্ছা’ পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে বছরের শুরুর দিনের জন্যে।
আর এটাও সত্য যে, এমন শুভেচ্ছা তার জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না। বাস্তবে এসব শুভেচ্ছাবাণী প্রতিফলিত হয় না।
একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেককেই দুনিয়ার উন্নতি-অগ্রগতির পাশাপাশি পরকালের সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে ভাবতে হবে। আল্লাহবিশ্বাসী কারও জন্যেই এর কোনো বিকল্প নেই।
আমরা বিশ্বাস করি, পরকালের জীবনই আমাদের প্রকৃত জীবন। তাই আমাদের প্রতিদিনই ভাবতে হবে আমাদের পরকাল নিয়ে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আজ যে পাপ হয়ে গেছে, প্রতিজ্ঞা করতে হবে- তা যেন কাল আর না হয়। যে আমলটি আজ পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে করা হয়নি, কাল তা আরও অধিক যত্নের সঙ্গে করার চেষ্টা করতে হবে। কোনো ভালো কাজ কাউকে করতে দেখলে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজেও তা করার সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। তাহলে আমাদের বছরের প্রতিটি দিনই নতুন বছর হয়ে সামনে আসবে।
হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিনি এর জবাবে বললেন, আমাদের এ নববর্ষ তো প্রতিদিনই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৪
এএটি