ইসলামের পথ সব সময় মসৃণ। গোলকধাঁধার মধ্যে ফেলে কোনোকিছু শিকার করার নাম ইসলাম নয়।
আমাদের পরিবারে, গোত্রে, সমাজে, গ্রাম-মহল্লায় অথবা রাষ্ট্রের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও কাউকে সীমালঙ্ঘন করতে দেখলে আমরা কষ্ট পাই। হোক না বড় কেউ, হোক না নিজের অফিসের বড় কর্তা কারো অহংকার আমাদের ভালো লাগে না।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে সীমার গুরুত্ব অপরিসীম। আজকাল মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, ধর্মের নামে সন্ত্রাস করছে। ইসলাম পবিত্র এক জীবনাদর্শ। এখানের সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। অন্যায়ভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো অধিকার নেই। অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করারও সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ তো ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি পছন্দ করেন না। ’ [সুরা আল-বাকারা, আয়াত নং ২০৫]
কুরআনের ‘ফাসাদ’ শব্দের বর্তমান তরজমা হলো ‘সন্ত্রাস’। সন্ত্রাসীদের পক্ষে কেউ নেই। একজন সাধারণ মানুষও সন্ত্রাসীকে ভালোবাসে না, সন্ত্রাসীকে আপন করে নিতে পারে না। মূলত সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাত নেই। মহান আল্লাহও পছন্দ করেন না। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না। ’ [সুরা কাসাস, আয়াত নং ৭৭]
সন্ত্রাস ছড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পৃথিবীতে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে ছড়িয়ে যেও না। ’ [সুরা আল-বাকারা, আয়াত নং ৬০]
সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি প্রতিস্থাপনকারী সমাজ ধ্বংসের মূল কারিগর। যারা সাংগঠনিকভাবে এই সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে, এর পরিণাম শুভ নয়। এসব সন্ত্রাসবাদীর পথ মাড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের কথা মানলে, সন্ত্রাসীদের ভয় করলে, তাদের অনুসরণ করলে সমাজে চরম বিপর্যয় ও অবক্ষয় শুরু হবে, যা আর থামানো যাবে না। এজন্য কুরআন মজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা মানবে না সীমালঙ্ঘনকারীদের নির্দেশ, অনুসরণ করবে না তাদের বিষয়, যারা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে; আর কল্যাণ করে না এর। ’ অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘ফাসাদকারী ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের পথ বর্জন করবে। ’ [সুরা আশ-শুআরা, আয়াত নং ১৫২]
পৃথিবীজুড়ে নির্মম কিছু ঘটনা যে কাউকে ভাবিয়ে তোলে। যুদ্ধেরও কোনো নিয়ম নেই। শিশু হত্যা-নারী হত্যা-বৃদ্ধা হত্যার কোনো নিয়ম তো নেই-ই। বিশ্বজুড়ে যেসব যোদ্ধা যুদ্ধ করছে, তারা কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না। আসল কথা হলো, সন্ত্রাসীর কোনো ধর্ম নেই। তাদের একটাই ধর্ম, তারা সন্ত্রাসী। হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামান্য বৃক্ষও উৎপাটন করতে নিষেধ করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ির কোনো সুযোগ রাখেননি। হাবীব ইবনে ওয়ালীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন, ‘তোমরা আল্লাহ এবং আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা করো। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি, (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারার বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না। ’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ, ৯৪৩০]
হাদিসের এই ভাষ্য মানুষ যদি মানতে পারে, জীবনের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারে, সমাজ তখন আলোকিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নৈতিকভাবে গড়ে উঠতে না পারলে, সমাজ রাঙাতে না পারলে সন্ত্রাস বন্ধ করা কঠিন। এজন্যই কুরআনে সহজ-সরল পথের কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে দোয়া শিখিয়ে বলেন, ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখান। ’ [সুরা আল-ফাতিহা, আয়াত নং ৫]
পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কাদের পথ অনুসরণ করতে হবে, সেটাও বলেছেন, ‘তাদের পথ, যাদের ওপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন, যাদের ওপর (আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়। ’ [সুরা আল-ফাতিহা, আয়াত নং ৬-৭]
মসৃণ পথই আলোকিত মানুষের পথ। মানুষ প্রশান্তির এই জায়গাটুকুই সম্বল করে বাঁচতে চায়। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের যে হোলি খেলা শুরু হয়েছে, তা আমাদের মানবতা বোধকে নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছে, জীবনবোধকে পরাস্ত করছে। আলোকিত পৃথিবী গঠনে মুমিনকেই সবার আগে মানুষ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন, আমীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৪
জেএইচ