সাহাবি হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়নি।
শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চার করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, যা এক মাসের রাস্তার সীমা পর্যন্ত প্রযোজ্য।
আমার উম্মতের যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো স্থানে নামাজের সময় হলেই নামাজ আদায় করতে পারবে। আর আমার জন্য গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হালাল করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কারও জন্য হালাল ছিল না। আমাকে (কিয়ামত দিবসে) শাফায়াত তথা সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেক নবীকে বিশেষভাবে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে, আর আমি সব মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি। -সহিহ বোখারি, ১ম খণ্ড, পৃ ৩৪৫, হাদিস নং- ৩৩৫
বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে যা তিনি ব্যতীত অন্য কোনো নবী বা রাসূলকে দেওয়া হয়নি। বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম হলো- আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় রাসূল (সা.)-এর শত্রুদের মনে এমন অস্থিরতা ও ভীতি সঞ্চার করে দেন যাতে তারা এক মাসের দূরত্বের রাস্তায় থাকলেও রাসূলের ভয়ে তটস্থ ও বিচলিত থাকে।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো- পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য আহলে কিতাব ও অন্যদের নির্দিষ্ট ইবাদতখানায় ইবাদত করা অপরিহার্য হলেও শেষ নবী ও তার উম্মতের জন্য পুরো জমিনকে নামাজের স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের বিধান দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ দুর্লভ সুযোগ মুসলমানদের দ্বীন পালনে অত্যন্ত সহায়ক ও আরামদায়ক। অতএব যখন যেখানে নামাজের সময় হবে তখন সেখানে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। এ ছাড়া মাটিকে পবিত্র করা হয়েছে, যাতে তা দ্বারা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এটিও এই উম্মতের জন্য আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো- এই নবী ও তার উম্মতের জন্য যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে। যা পূর্বে কোনো নবীর জন্য বৈধ ছিল না।
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য হলো- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কিয়ামত দিবসে শাফায়াত বা সুপারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং তার সুপারিশ গ্রহণ করার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা অঙ্গীকার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.)-কে বলা হবে- তুমি সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
পঞ্চম ও সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- সকল নবীকে তাদের স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে আর আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সাদা, কালো, আরব, অনারব নির্বিশেষ সব মানুষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির নিকট সুসংবাদদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে জ্ঞান রাখে না। ’ -সূরা সাবা ২৮
এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, নবী করিম (সা.)-কে সমগ্র মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আর এটি হচ্ছে তার জন্য বিশেষ নিয়ামত ও পুরস্কার। কেননা সব নবীকেই বিশেষ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে; ব্যতিক্রম শুধু শেষ নবীর ক্ষেত্রে।
বর্ণিত হাদিসের প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
ক. এই হাদিস নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও তার উম্মত তথা আমাদের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্যের বার্তা বহন করে।
খ. রাষ্ট্রনায়ক বা আল্লাহর পথে দাঈ (আহ্বানকারী) হিসেবে সফলতা লাভের জন্য শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চার জরুরি।
গ. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা,)-এর শত্রু বা প্রতিপক্ষের লোকদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে তাকে যে সাহায্য করা হয়েছে- এটি তার মুজিযার অংশ।
ঘ. পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার।
ঙ. গনিমতের মাল দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ।
চ. বিশেষ কোনো দল, গোত্র, বংশ বা জাতির কাছে প্রেরিত না হয়ে বিশ্বমানবতার দূত হিসেবে আগমন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
এসআইএস