জীবন চলার পথে নানা সময়ে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়। কষ্ট পায়, অসুস্থ হয়।
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণের জন্য সবর ও নামাজের মাধ্যমে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ দিচ্ছেন। এই আয়াতাংশ আমাদের উত্তমরূপে অনুধাবন করা প্রয়োজন। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আবু বকর আল জাসসাস ‘আহকামুল কুরআন’ তাফসিরে লিখেছেন, এর অর্থ আল্লাহ যা ফরজ করেছেন, সেসব ফরজ কাজ অত্যন্ত ধৈর্য-সহকারে আদায় করতে থাকা। আর তার হুকুম অমান্য করা থেকে বিরত থাকা।
আয়াতে নামাজের পাশাপাশি এসেছে সবরের কথা। পবিত্র কোরআনে সবর শব্দটির অর্থ ব্যাপক। হাদিসে এর ব্যবহার এসেছে ব্যাপক অর্থে। যেমন কোথাও এসেছে ধৈর্যধারণ অর্থে; যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান মানুষের সঙ্গে একাত্ম ও একত্র হয়ে বসবাস করে এবং তাদের সদ্ভাব ও যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করে, সে ব্যক্তি ওই মানুষের চেয়ে উত্তম, যে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করে না....। ’
কোথাও সবর এসেছে দৃঢ়তা অর্থে; যেমন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করো না, আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা করো। কিন্তু যখন শত্রুর সম্মুখীন হও, তখন ধৈর্য ও দৃঢ়তা প্রকাশ করো।
আসলে সবর এমন একটি শব্দ যা নির্দিষ্ট কোনো প্রতিশব্দে প্রকাশ করা বা বুঝানো কঠিন। এ শব্দটি যেসব ব্যঞ্জনাময় অর্থ প্রকাশ করে তার মধ্যে রয়েছে-
১. পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য সহিষ্ণুতা, অধীর না হওয়া।
২. সহিষ্ণুতা, অধ্যবসায়, দৃঢ় সংকল্প, স্থিরতা- উদ্দেশ্য সাধনে কঠিন হওয়া।
৩. আকস্মিক বা দৈব কার্যকরণের বিপরীতে সুবিন্যস্ত বা প্রণালিবদ্ধ ভাবে কার্য সম্পাদন করা।
৪. দুঃখ, পরাজিত বা ভোগান্তি অবস্থায় বিরক্ত ও বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন না হয়ে এসব অবস্থা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণপূর্বক আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং অলস ও উদাসীন না হয়ে অবিরত দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
বস্তুত সৎ ও পুণ্যের পথে চলা যদি কারো পক্ষে কষ্টকর বলে মনে হয়, তবে এর একমাত্র প্রতিষেধক হচ্ছে ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও নামাজ। আর এ দুটি কাজ থেকে মুমিন-মুসলমানরা যে শক্তি লাভ করবে; সেটা তার পথচলাকে সহজতর করে দেবে।
সবর এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিরত রাখা ও বাধা দেওয়া। আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- ইচ্ছার দৃঢ়তা, সংকল্পের পরিপক্কতা এবং লালসা-বাসনা নিয়ন্ত্রণ। যে ইচ্ছার মাধ্যমে কোনো মানুষ তার লালসা ও বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে নিজের মনোনীত পথে অব্যাহত গতিতে অগ্রসর হতে পারে। এখানেই সবরের তাৎপর্য নিহিত।
কারণ, বর্ণিত গুণ নিজের মধ্যে জাগিয়ে অন্তরকে শক্তিশালী করার জন্য রীতিমতো সাধনা আবশ্যক। আর ওই সাধনা হতে হবে নিরবচ্ছিন্ন, সংগ্রামমুখর ও কষ্টসাধ্য। তাই তো সবরের কথা বারবার বলা হয়েছে।
অনেকে সবরের অর্থ বলেছেন, আল্লাহর মর্জির ওপর তাকে খুশি করার জন্য ধৈর্যধারণ। আর ধৈর্যশীলতাই তো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের পথ। এ সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলল, তোমাদের জন্য আক্ষেপ! ঈমানদার লোকদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার উত্তম, ধৈর্যশীল ছাড়া তার সাক্ষাৎ পাবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
এসআইএস