পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো— তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুরা রুম, আয়াত ২১)
ইসলামে বিয়ের যাবতীয় নিয়মকানুন এবং বিধান-শর্ত ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
ইসলামে বিয়ের রুকন বা মৌলিক ভিত্তি
এক. বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া।
দুই. ইজাব বা প্রস্তাবনা এটি হচ্ছে বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থান করা। যেমন, ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম’ অথবা এ ধরনের অন্য কোনোভাবে প্রস্তাব পেশ করা।
তিন কবুল বা গ্রহণ করা এটি বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন, ‘আমি কবুল বা গ্রহণ করলাম’ ইত্যাদি।
বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত
(১) বর-কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।
(২) বর-কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি। ’ (বুখারি, হাদিস নং ৪৭৪১)
(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। ’ (সুরা নুর, ২৪৩২)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং ১০২১)
(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। ’ (সহিহ জামে, হাদিস নং ৭৫৫৮)
সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১২৬৮)
বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১০৭২)
কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত
১. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।
২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।
৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।
৪.অভিভাবক কনের ধর্মানুসারী হওয়া। সুতরাং কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।
৫. ন্যায়পরায়ণ হওয়া। অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক ‘আদালত’কে (ধর্মভীরুতা) যথেষ্ট বলেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলেও চলবে।
৬.পুরুষ হওয়া। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক নারী অন্য নারীকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিণী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৭৮২; সহিহ জামে ৭২৯৮)
৭. বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের ‘কুফু’ বা সমতা ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতাবান হওয়া।
ফিকাহবিদরা অভিভাবকদের ধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
এসআইএস