ইসলাম তার সব বিধানে শান্তি ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করেছে। ইসলামের বিধানসমূহে মানবতাবোধ ও উন্নত নৈতিকতার প্রকাশ ঘটেছে।
দ্বীন ইসলাম হলো- ভালোবাসার দ্বীন, শান্তির দ্বীন, সম্প্রীতির দ্বীন; সঠিক পথ ও মতের দ্বীন। এ বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এর বিপরীতে যা বলা হয়, তা অপবাদ ও অপপ্রচার।
শান্তি ও নিরাপত্তা মানুষের স্বভাবজাত প্রয়োজন। শান্তি ও নিরাপত্তা মানবিক প্রয়োজন। শান্তি ও নিরাপত্তা ছাড়া নির্মাণ, উন্নয়ন, উন্নতি, উৎকর্ষ, সমৃদ্ধি ও উদ্ভাবন- কোনোটিই সম্ভব নয়।
শান্তি ও নিরাপত্তার অনুপস্থিতিতে ঘটে বিপর্যয়। সমাজে দেখা দেয় নানান সঙ্কট। ইসলামপূর্ব যুগে গোত্রীয় ও গোষ্ঠীগত শাসনের সময় এমন অন্যায় শক্তি প্রদর্শন, প্রাধান্য বিস্তার ও প্রতিশোধের নেশায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলত যুগ যুগ ধরে।
তখন ইসলামের আবির্ভাব হয়- শান্তির আহ্বান নিয়ে। তাই ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে শান্তি ও নিরাপত্তার। ইসলাম রুখে দাঁড়ায় তাবৎ যুদ্ধ, সঙ্ঘাত ও হত্যার বিরুদ্ধে।
ইসলাম সংঘাত ও সংঘর্ষের আগুন নিভিয়ে মানবতাকে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে আস্থা-বিশ্বাস, সংহতি ও সহমর্মিতার উন্মুক্ত ক্ষেত্রে নিয়ে এলো। কেননা ইসলাম হলো- শান্তি, বিশ্বস্ততা ও সংহতির জীবনব্যবস্থা।
ইসলামি শরিয়তে রয়েছে মানুষের পার্থিব জীবনের স্বার্থ ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ। যেখানে মানুষের কল্যাণ, সেখানেই আল্লাহর শরিয়ত।
দেখুন, সালাম। একজনের জন্য আরেকজনের কল্যাণ কামনা। এই শব্দটির উৎপত্তি ‘ইসলাম’ থেকে। পরস্পরের জন্য পরস্পরের কল্যাণ কামনায় সালাম শব্দের সঙ্গে মানুষের পরিচয় ঘটেছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পর।
কোরআনে কারিমে বিভিন্নভাবে ‘সালাম’ শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে ৪৪ বার। এর বিপরীতে যুদ্ধের উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ছয় বার।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনালেখ্য ও ইসলামের বিজয় অভিযানের ঘটনাবলি প্রমাণ করে, বিশ্বময় ইসলামের ব্যাপক প্রসারের মূলভিত্তি ও কার্যকরী শক্তি ছিল উত্তমরূপে ইসলামের দাওয়াত পেশ ও সুন্দর কথা। এমনকি যুদ্ধকালীন সময়েও উত্তম আচরণ।
সাহাবি হজরত বুরাইদা (রা.)-এর সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো অভিযানে সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রাক্কালে সেনাধ্যক্ষকে ব্যক্তিগতভাবে তাকওয়া অবলম্বনের এবং তার সঙ্গে মুসলিমদের কল্যাণ বিবেচনার পরামর্শ দিতেন। তারপর সবাইকে উদ্দেশ করে বলতেন, ‘তোমরা যুদ্ধ করবে, গণিমতের সম্পদে খিয়ানত করবে না, অবিশ্বস্ত আচরণ করবে না, মৃতদের লাশের অপমান করবে না। শিশু ও নারী হত্যা করবে না। গির্জা ধ্বংস করবে না। খেজুর গাছ কাটবে না। ’
হজরত নবী করিম (সা.)-এর এই উপদেশবলির মধ্যে ফুটে উঠেছে করুণা ও দয়া। আর এ দয়া-মায়া-মমতা ও ভালোবাসা শুধু মানুষের জন্য নয়, সবার জন্য- এমনকি উদ্ভিদের জন্যও।
ইতিহাসের কোনো অধ্যায়ে পৃথিবী ও পৃথিবীবাসী এর চেয়ে পরিপূর্ণ, উত্তম ও উন্নত মানবিকতা ও নৈতিকতা আর কোথাও কি দেখেছে? চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীরা কি এ মহান মানবিকতা ও নৈতিকতা বিবেচনায় রাখবে না?
ইসলাম এসেছে ইনসাফপূর্ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ শরিয়ত নিয়ে। যার লক্ষ্য বিপর্যয় ও ধ্বংস নয়, বরং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসলাম সর্বদা এমন বিষয়কেই গুরুত্ব প্রদান করে, যাতে রয়েছে মানুষের স্বার্থ আর দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি।
ইসলামের সঙ্গে কঠোরতা ও সন্ত্রাসকে যুক্ত করা মূলতঃ ইসলামকে অন্যায়ভাবে অপবাদ দেওয়া। ইসলামের সঙ্গে কঠোরতা, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলামের অন্যতম মূলনীতি হলো- ‘দ্বীনের মধ্যে জোর-জবরদস্তি নেই। ’ ইসলামি দাওয়াতের পদ্ধতি হলো- ‘ডাকো তোমার রবের পথের দিকে বুদ্ধিমত্তা, উত্তম বক্তব্য ও সুন্দর বিতর্কের মাধ্যমে। ’
ইসলাম শান্তি ও কোমলতার দ্বীন। ইসলাম ছাড়া পৃথিবীকে শান্তির আলোতে আলোকিত করা সম্ভব নয়।
বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে মুসলিমদের সরে যাওয়াতে পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালা সব জাতিকে সমান মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাদের কেউ প্রভু আর কেউ ভৃত্য নয়। সবলরা দুর্বলদের ওপর অবিচার করলে শান্তি আসবে না। প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা ইসলামের ছায়াতলেই নিশ্চিত হবে।
যেহেতু ইসলাম বিশ্বকে উন্নত সভ্যতা উপহার দিয়েছে। তাই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ইসলামের দেখানো পথে চেষ্টা করার পাশাপাশি সংশোধন ও গঠনমূলক কাজের দিকে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪