সমাজে ভালো প্রথা চালু করাসহ অনেকে স্থায়ী উপকারী কাজ করেন, যেগুলোর পুণ্য মৃত্যুর পরও চলমান থাকে। ইসলামের ভাষায় এর নাম সদকায়ে জারিয়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যেকোনো মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল ফলায়, আর তা থেকে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায়, তবে তা তার পক্ষ থেকে সদকা বলে গণ্য হবে। (বুখারি, হাদিস: ২৩২০)
যে আমলগুলোর পুণ্য চলমান থাকে: বই-পুস্তক লেখা, উপকারী বিদ্যা শেখানো বা অন্য কোনোভাবে ইসলামী জ্ঞানের স্বাক্ষর রাখতে পারলে এর সওয়াব চলমান থাকে। নেককার সন্তান বা নেককার প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারলে এর সওয়াব চলমান থাকে। হাফেজে কোরআনের ধারাবাহিকতা চালু করতে পারলে এর সওয়াব চলমান থাকে। মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বা প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে পারলে এর সওয়াব চলমান থাকে। সরাইখানা নির্মাণ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারলে এর সওয়াব চলমান থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলো যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে। তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান। কোরআন, যা সে ওয়ারিসি সূত্রে রেখে গেছে। মসজিদ, যা সে নির্মাণ করিয়েছে। পথিক-মুসাফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে। পানির নহর, যা সে খনন করেছে। তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার মাল থেকে যে দান-খয়রাত করেছে তা তার মৃত্যুর পরও তার সঙ্গে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৪২)
মানবকল্যাণে হাসপাতাল নির্মাণ করা, হাসপাতালের কোনো যন্ত্রপাতি কিনে দেওয়া, স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা কিংবা কোনো অসহায়কে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার মতো জনকল্যাণকর কাজ করলেও এর সওয়াব চলমান থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান, যে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের জন্য আমল করে। (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৫৯)
ভালো কাজের প্রতি আহ্বানের সওয়াব চলমান: ভালো কাজের প্রতি আহ্বানের দ্বারা যত মানুষ ভালো কাজ শুরু করবে—সবার ভালো কাজের সওয়াব আহবানকারীর আমলনামায় তার মৃত্যুর পরও পৌঁছাতে থাকবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিক পথের দিকে ডাকে, তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান আছে। (মুসলিম, হাদিস: ৬৬৯৭)
ভালো কাজ চালুর সওয়াব চলমান: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো ভালো প্রথা চালু করল এবং পরবর্তীকালে সে অনুসারে আমল করা হলো। তাহলে আমলকারীর প্রতিদানের সমান প্রতিদান তার জন্য লিখিত হবে। এতে তাদের প্রতিদানে কোনো ঘাটতি হবে না। আর যে লোক ইসলামে কোনো মন্দ প্রথা চালু করল এবং তারপর সে অনুযায়ী আমল করা হলো। তাহলে ওই আমলকারীর সমান গুনাহ তার জন্য লিখিত হবে। এতে তাদের পাপ সামান্য ঘাটতি হবে না। (মুসলিম, হাদিস: ৬৬৯৩)
মৃত মানুষের জন্য কোন আমল বেশি সমীচীন: মৃতের উদ্দেশে এমন আমল বা কাজ করা উচিত, যার উপকারিতা চলমান। তাহলে পুণ্য পৌঁছার ধারাবাহিকতাও চলমান থাকবে। সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! উম্মে সাদ (আমার মা) মৃত্যুবরণ করেছেন (তার পক্ষ থেকে) কোন সদকা সর্বোত্তম হবে? তিনি বলেন, পানি। বর্ণনাকারী বলেন, সাদ (রা.) একটি কূপ খনন করে বলেন, এটি উম্মে সাদের কল্যাণের জন্য ওয়াকফ। (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬৮১)।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
এমজে