আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন- আমার ভয় এটা নয় যে, তোমরা দরিদ্রতার কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে, বরং আমার ভয় তাদের জন্য, যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েও নিজেকে গরিব-দরিদ্র মনে করবে। কারণ তার সম্মুখে যখন আরেকজনের অধিক অর্থসম্পদ দেখবে তখন তার অর্থসম্পদকে নেহায়েত অল্প মনে হবে।
হাদিস শরিফে এসেছে, যে মাসআলা তুমি জান, যদি সে অনুযায়ী আমল না কর তাহলে মনে রেখ হাশরের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। এর মধ্যে সর্বশেষ প্রশ্ন হলো- যা তোমার জানা ছিল, সেই মোতাবেক তুমি আমল করেছ কি না? যদি জানা না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে একটা জবাব দিতে পারবে। কিন্তু জানা থাকা সত্ত্বেও যদি আমল না কর তাহলে এর কী উত্তর দেবে?
একবার এক লোক আমাকে বলল যে, হুজুর! না জানলেই ভালো? তাই আপনি আর আমাদের কোনো কিছু জানাবেন না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে তুমি আমার বিধিবিধান জানতে? যদি বলে হ্যাঁ, জানতাম। তাহলে বলা হবে ভিতরে যাও। তুমি ওইদিকে আমার লোক। আর যদি বলে- না, জানি না। তাহলে বলা হবে, যাও। তুমি জান না। এ হলো বিপদ। যদি এমন হতো যে, প্রথম গেটে না জেনে প্রবেশ করা যেত তাহলে কোনো অসুবিধা ছিল না। আগে পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহপাক জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা আমাকে চেন? যদি বলে না, তাহলে আল্লাহপাক বলবেন, তোমরা অন্য মানুষ, তোমরা বাইরে চলে যাও।
না জানলে উপায় নেই। তাই জেনে আমল করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, আমল করার ক্ষেত্রে যেন চেষ্টায় কোনো ত্রুটি না হয়। তারপরও যদি কোনো ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে এর সমাধান হাদিসে এসেছে।
এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি বিশুদ্ধভাবে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতে চেষ্টা করি, কিন্তু জিহ্বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারি না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চেষ্টা কর? সে বলল জি, আমি চেষ্টা করি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি উম্মতকে শুনিয়ে দাও যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষার চেষ্টা করে, তার প্রতিটি আমলে ডাবল সওয়াব দান করা হয়। বুঝে আমি কেন শিখব না। তাই আমাকে আমার সাধ্যানুযায়ী শিখতেই হবে, শিখে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। যদি আমি আমল করতে ব্যর্থ হয়ে যাই, তাহলে আমার চেষ্টার কারণে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেবেন।
যাই হোক বলছিলাম যে, প্রথমে ইলম শিক্ষা করতে হবে, দ্বিতীয় নম্বরে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আমার যাবতীয় আমল যেন আমার ইলম মোতাবেক হয়। আমি জানি, আমার নামাজ পড়তে হবে; অবহেলায় যেন নষ্ট না হয়। আমি জানি আমার জবানের হেফাজত করতে হবে; আমার জবান থেকে যেন কারও গিবত বের না হয়। গিবত তথা অন্যের দোষ চর্চা করা মহাপাপ। গালিগালাজ করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বলা মহাপাপ। এ জাতীয় গুনাহ মাফ করা হয় না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে গিয়ে মাফ চাওয়া হয়। তাই আমাকে আমার জবানের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
পর্দার হুকুম সম্পর্কে আমার জানা আছে, তাই আমাকে পর্দার হুকুম পালন করতে হবে। সর্বোপরি সব গুনাহ সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে, তাই সব গুনাহ আমাকে বর্জন করতে হবে। আমাকে সব নেক কাজ করতে হবে। সুতরাং যে বিষয়গুলো আমার জানা আছে, সে অনুযায়ী যদি আমি আমল করি এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করি তাহলেই আমার নাজাতের জন্য তা যথেষ্ট হবে।
আল্লামা মুহাম্মাদ বিন ফুজাইল বুখারি বলখি (রহ.) বলেছেন, দুর্ভাগা সেই ব্যক্তি, যে জানার পরও আমল করে না। জানে তাহাজ্জুদ পড়লে বিরাট সওয়াব হয়, সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত এশরাকের নামাজ পড়লে বিরাট সওয়াব হয়। মানুষের উপকার করলে মহা লাভ হয় ইত্যাদি সবকিছুই জানে, কিন্তু তারপরও আমল করে না, তাহলে তার চেয়ে হতভাগা দুনিয়া ও আখেরাতে আর কেউ নেই।
আমল মাকবুল থেকে দুটি শর্ত : শুধু আমল থাকলেই হবে না; আমলের মধ্যে আরও দুটি বিষয় থাকতে হবে। এক. আমলের আত্মা তথা এখলাস থাকতে হবে। অর্থাৎ আমার আমল হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। নামাজ পড়ি আল্লাহর জন্য, দান-খয়রাত করি আল্লাহর জন্য। মোটকথা আমি যা কিছু করি তা কেবল আল্লাহর জন্য। এটাকে বলা হয়- এখলাস। শরীরের জন্য আত্মা যেমন, আমলের জন্য এখলাসও ঠিক তেমন।
দুই. আমলটা সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। যেভাবে মন চায় সেভাবে আমল করলে হবে না, বরং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আমল করেছেন সেভাবে আমল করতে হবে। তিনি যেভাবে নামাজ পড়েছেন সেভাবে নামাজ পড়তে হবে। তিনি যেভাবে হজ করেছেন সেভাবে হজ করতে হবে। তাঁর পোশাক যেমন ছিল তেমন পোশাক পরতে হবে। তিনি যেভাবে খানা খেতেন সেভাবে খেতে হবে। তিনি যেভাবে ঘুমাতেন সেভাবে ঘুমাতে হবে।
মোটকথা আমার যাবতীয় কাজকর্ম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। এ হলো মোট চারটি বিষয়- এক. ইলম, দুই. আমল। আমলের জন্য আবার দুটি বিষয় প্রয়োজন। এক. এখলাস, দুই. সুন্নতের অনুসরণ। আল্লাহপাক সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
জেএইচ