সন্তান জন্মের পর সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয় মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন। তাই বিভিন্ন আয়োজন ও নানা উপহারের মাধ্যমে শিশুকে স্বাগত জানায় তারা।
নাম রাখার ক্ষেত্রে মায়েদের অধিকার
অনেকের ধারণা শিশুর নাম রাখার অধিকার কেবল বাবা, দাদা ও নানাদের। অথচ জন্মের পর সন্তানের সবচেয়ে কাছের ও প্রিয় মানুষ হলো তার মা। যিনি গর্ভধারণ থেকে নিয়ে প্রসবের যাতনা এবং লালন-পালনের সমস্ত কষ্টকে হাসিমুখে সহ্য করেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই একজন মায়েরও নাম রাখার ইচ্ছা জাগতেই পারে। যদিও তিনি পরিবারের অন্যদের কথা মেনে নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা লুকিয়ে যান। কিন্তু অন্যদেরও উচিত মাকেও নামকরণের সুযোগ দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে মারইয়াম (আ.)-এর মায়ের ঘটনা বিবৃত হয়েছে। তিনি নিজে তাঁর সন্তানের নাম রেখেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন তাকে প্রসব করল, বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি একে কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুত কী সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালো জানেন। সেই কন্যার মতো কোনো পুত্রই যে নেই।
আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদের তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৬)
সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ নামের গুরুত্ব
পৃথিবীতে সুন্দর, শ্রুতিমধুর ও অর্থবহ নামের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি আখিরাতেও এর গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্ট। কারণ কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নাম ধরেই ডাকা হবে। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে, তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৮)
আল্লাহর দাসত্বের অর্থ বহন করে এমন নাম রাখা
আবদিয়্যাত তথা আল্লাহর দাসত্বের অর্থ বহন করে এমন নাম রাখাই উত্তম। কারণ আমরা সবাই তাঁর বান্দা বা দাস। তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর দাসত্ব মেনে নতি স্বীকার করাই হলো বান্দার কাজ। আর এতেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান নাম আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি পছন্দনীয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৩৩)
নবী-সাহাবি বা ওলিদের নামে নামকরণ
আবু ওয়াহব আল জিশামি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা নবী-রাসুলগণের নামে নামকরণ করো। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। নামের মাঝে হারিস ও হাম্মাম হলো বিশ্বস্ত নাম এবং হারব ও মুররাহ হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫০)
মুগিরাহ ইবনে শুবাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর একনিষ্ঠ উম্মতগণ তাদের পূর্ববর্তী নবী সালিহগণের নামে (বাচ্চাদের) নাম রাখত। (মুসলিম, হাদিস : ৫৪৯১)
অমুসলিমদের নামে নামকরণ
অমুসলিম খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা কিংবা গায়ক-গায়িকা তথা বিধর্মী প্রিয় কারো নামে নামকরণ হারাম। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)
এমনকি মন্দ অর্থের দিকে ইঙ্গিত করে এমন নাম পরিবর্তন করে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে শরিয়তে। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) আসিয়া (রা.)-এর নাম পরিবর্তন করে বলেন, তুমি জামিলা। অর্থাৎ তোমার নাম এখন থেকে জামিলা। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৩৮)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আগত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক লোকের নাম ছিল আসরাম (কর্কশ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমার নাম কী? তিনি বলেন, আমি আসরাম। তিনি বলেন, না, এ নাম ঠিক নয়, বরং তুমি জুরআহ (শস্যদানা)। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫৪)
শিশুর নামকরণের সময়
নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা ও আকিকা করা সুন্নত। হাদিস শরিফে এসেছে, আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখতে, মাথা মুণ্ডন করতে এবং আকিকা করতে আদেশ করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৩২)
তবে শিশু দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠের আগে কিংবা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেও নাম রাখা জায়েজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে জাকারিয়া, আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারো নামকরণ করিনি। (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৭)
আর জন্মের পর সঙ্গে সঙ্গে নাম রাখাও শরিয়ত অনুমোদিত। সাহাবি আবু মুসা (রা.) বলেন, আমার পুত্রসন্তান জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহিম। তারপর খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে ছিল আবু মুসার সবচেয়ে বড় ছেলে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৭)
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৪
এএটি