ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামী ইতিহাসের বিখ্যাত শহর সমরকন্দ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
ইসলামী ইতিহাসের বিখ্যাত শহর সমরকন্দ

সমরকন্দ উজবেকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ২৭৫০ বছরের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য সমরকন্দকে ইতিহাসের পাতায় দেদীপ্যমান করে রেখেছে।

সমরকন্দ প্রত্যক্ষ করেছে ইতিহাসের নানা পট পরিবর্তন। এক সময় সমরকন্দ প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের সাগ্দিয়ানা প্রদেশের রাজধানী ছিল।

উজবেকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ এ শহর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, চেঙ্গিস খান, তৈমুর লংয়ের মতো বিশ্ববিজেতাদের উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সমরকন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রোম ও ব্যাবিলনের সমসাময়িক সময়ে।

ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে সমরকন্দের খ্যাতি জগৎজোড়া। প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, মঙ্গোলীয় ও ইরানি সংস্কৃতির স্রোতধারা মিলিত হয়েছে সমরকন্দের মোহনায়। কবি ও ইতিহাসবেত্তাদের কাছে সমরকন্দ ‘প্রাচ্যের রোম’ হিসেবে পরিচিত।

২০০১ সালে ইউনেসকো ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকায় ২৭৫০ বছরের প্রাচীন সমরকন্দকে ‘বহু সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র’ (crossroad of Culture) হিসেবে আখ্যায়িত করে। প্রাচীন আরবি নথিপত্রে সমরকন্দকে ‘প্রাচ্যের রত্ন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ইউরোপীয়দের কাছে সমরকন্দ ‘বিজ্ঞানীদের বিচরণক্ষেত্র’ নামে পরিচিত। রাতের আলোয় সমুজ্জ্বল সমরকন্দের ইসলামী-স্থাপত্য 
রাতের আলোয় সমুজ্জ্বল সমরকন্দের ইসলামী-স্থাপত্য

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৯ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট সমরকন্দ জয় করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘এই শহরের সৌন্দর্য সম্পর্কে যা শুনেছি, তা অবিকল সত্য। তবে পার্থক্য হলো, এটি আমার শোনা বর্ণনার চেয়েও বেশী সুন্দর। ’

প্রাক-ইসলাম যুগে এবং ইসলাম বিজয়ের পরেও সমরকন্দ সমৃদ্ধ শহর হিসেবে গণ্য হতো। উমাইয়া শাসনামলে সমরকন্দ মুসলিম সাম্রাজ্য ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়।

মূলত প্রাচীন রেশম সড়কের ধারে অবস্থিত হওয়ায়, এটি মধ্য এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন  প্রান্তের বণিকরা এই শহরে এসে মিলিত হত এবং তাদের পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় করতো।

আব্বাসীয় শাসনামলে সমরকন্দ মধ্য এশিয়ার রাজধানীতে পরিণত হয়। তখন শহরটি মধ্য-এশিয়ার মুসলিম সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ১২২০ সালে আগ্রাসনের মাধ্যমে দখল করে চেঙ্গিস খান শহরটি এক প্রকার ধ্বংস করে দেয়।

সমরকন্দ যখন তৈমুরের রাজধানী
১৪ শতাব্দীতে সমরকন্দ পুনরায় জেগে ওঠে। বিখ্যাত তুর্কি বীর তৈমুর লং তখন তার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে সমরখন্দকে নির্বাচিত করেন। তৈমুরের অধীনে এটি সমৃদ্ধশালী শহর হিসেবে গড়ে ওঠে।

শিল্পের প্রতি তৈমুর লংয়ের আকর্ষণ ছিল খুব বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি দক্ষ  শিল্পীদের তার রাজধানীতে নিয়ে আসেন। তাদের বিভিন্ন বাহারি কারুকাজ ও স্থাপত্যশিল্পের মাধ্যমে তিনি সমরকন্দকে মধ্য এশিয়ার নান্দনিক শহরে পরিণত করেন।

সমরকন্দে তৈমুর লংয়ের সময়কালে নির্মিত সর্বাধিক আর্কষণীয় স্থাপনা হচ্ছে রাগেস্তান স্কয়ার। অনেকগুলো মসজিদ, সরাইখানা ও মাদরাসার সমন্বয়ে গঠিত রাগেস্তান স্কয়ার বিশাল একটি কমপ্লেক্স। বেশ কয়েক বার কমপ্লেক্সটির সংস্কার করা হয়।

তৈমুর-পরবর্তী সমরকন্দ কেমন ছিল
তৈমুর লংয়ের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৫ শতকের দিকে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়ে। পরবর্তী চার শতাব্দী এই শহর উজবেকরা শাসন করে। এরপর বুখারার আমিররা শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করে।

১৮৬৮ সালে রাশিয়া সমরকন্দ দখল করে নেয়। ১৯২৫ সালে সমরকন্দ উজবেক সোভিয়েত সোসালিস্ট রিপাবলিকের রাজধানীতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে রাজধানী সমরকন্দ থেকে তাসখন্দে স্থানান্তর করা হয়।

বৃহদাকৃতির প্রাসাদ, ফিরোজা গম্বুজ ও নীল টাইলসে সজ্জিত নীলাভ শহর সমরকন্দ বর্তমানে বৈশ্বিক আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।