মা-বোনদের প্রতি মাসেই স্বাভাবিক নিয়মে কিছুদিন অসুস্থ থাকতে হয়। এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে।
রোজার ক্ষেত্রে পরে তা কাজা করতে হয়। নামাজ সম্পূর্ণ মাফ হয়ে যায়। অনেক নারীর ধারণা, যেহেতু এই মাসে কোনো একসময়ে নামাজ-রোজা করতে হয় না, তাই আর তার জন্য কোনো ইবাদত নেই। সম্পূর্ণ হেলায়-খেলায় সময়গুলো কাটিয়ে দাও।
অথচ নামাজ-রোজা ছাড়াও আরো বহু কাজ আছে, এর মাধ্যমে এই মূল্যবান মাসকে কাজে লাগাতে পারে। আবার অনেক নারী এ ব্যাপারে চিন্তিত থাকে যে রমজান মাস, এত ফজিলত পূর্ণ মাসেও যদি বিশেষ দিন শুরু হয় তাহলে অনেক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়! আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। অথচ মক্কায় প্রবেশ করার আগেই ‘সারিফ’ নামক স্থানে তাঁর বিশেষ দিন শুরু হলো। তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন।
নবী (সা.) বলেন, তোমার কী হয়েছে? বিশেষ দিন শুরু হয়েছে না কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটা তো এমন এক বিষয়, যা আল্লাহ আদম (আ.)-এর কন্যাসন্তানের ওপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি আদায় করে যাও, হাজিরা যা করে থাকে, তুমিও অনুরূপ করে যাও। তবে তুমি বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৫০)
তাই এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বিশেষ দিনে নারীরা কিছু বিষয়ে যত্নবান হলে এ মাসের এই সময়কে অনেক মূল্যবান করে তুলতে পারে। নিচে তারই কিছু বর্ণনা উল্লেখ করা হলো—
ইফতার করানো
বিশেষ দিনে নারী নিজে রোজা রাখতে না পারলেও রোজাদারকে ইফতার করিয়ে বিশাল সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তবে তার জন্যও অনুরূপ (রোজার) সওয়াব হবে। কিন্তু এতে রোজা পালনকারীর সওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)
কোরআন তিলাওয়াত শোনা
বিশেষ দিনে নারীর জন্য কোরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ। তবে তার জন্য কোরআন তিলাওয়াত শোনার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা নেই। কোরআন তিলাওয়াত শোনার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষিত হতে থাকে। কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগসহ তা শোনো এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)
তাই নারীরা সেই নির্ধারিত সময়ে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত শুনতে পারে।
দান-সদকা করা
বিশেষ দিনে নারীরা এই সময়ে তাদের সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান-সদকা করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সবার চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাইল (আ.) যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো বেশি দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী (সা.) তাঁকে কোরআন শুনাতেন। জিবরাইল (আ.) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে বেশি ধন-সম্পদ দান করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৭৮১)
লাইলাতুল কদরে রাত জাগরণ করা
শেষ দশকে, বিশেষত কদরের রজনীতে, কারও যদি বিশেষ দিন শুরু হয় তবুও সম্ভাব্য রাতগুলোতে জাগবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৮০)
জিকির ও ইস্তিগফার পড়া
বিশেষ দিনে নারীরা তাদের রমজান মাসকে তাওবা-ইস্তিগফার ও জিকির-আজকারে কাটাতে পারে। হাদিসে এসেছে, রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন। এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৪৫০)
তাই রমজান মাসে তাওবা ও ইস্তিগফারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, পাশাপাশি দ্বিনি বই-পুস্তক পড়া, কাউকে কোনো কিছু শেখানো—এগুলোর মধ্যেও এই মূল্যবান সময় ব্যয় করা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
এমজে