ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নির্দেশনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নির্দেশনা

সাহাবি হজরত হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমান তাকে বলা হয় যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ। মুমিন ওই ব্যক্তি যার পক্ষ থেকে অন্য মানুষের জান-মালের ক্ষতির কোনো শঙ্কা না থাকে।

বর্ণিত হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একজন মুসলমানের স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কিছু গুণের কথা উল্লেখ করে দ্বীনের বিশাল এক তাৎপর্যময় শাখার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। যাতে অজ্ঞতার দরুন মানুষ দ্বীনের শাখা জ্ঞান করতে না চায়।

অনেকের ধারণা হলো, দ্বীন কেবল আকিদা, বিশ্বাস, নামাজ, রোজা ও নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত-বন্দেগির নাম। এসব ইবাদত-বন্দেগি পালন করার পর মানুষ তার জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে স্বাধীন।

অথচ বাস্তবতা হলো, ইসলাম যেমনিভাবে আমাদের নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ঠিকসেভাবেই জীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখাতে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা দিয়েছে, যার ওপর আমল করলে সমাজকে বেহেশেতে পরিণত করা সম্ভব।

সত্য এবং বাস্তবতা হলো, ইসলামের শিক্ষায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ আকিদা-বিশ্বাস এবং ইবাদত-বন্দেগির আলোচনা এসেছে। বাকি তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষা লেনদেন, আখলাক ও সামাজিক বিষয়সংক্রান্ত।

দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ শাখা-প্রশাখার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হলো সামাজিক আচার-আচরণ। যাতে অন্য মানুষের সাথে মেলামেশা ও পরস্পর মিলে জীবনযাপনের আদব-শিষ্টাচারের আলোচনা করা হয়েছে। উপরিউক্ত হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ ইসলামি সমাজব্যবস্থার স্বয়ংসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ চিত্র অঙ্কন করেছেন। কেননা, সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলাম যত বিধিবিধান দিয়েছে, তার চূড়ান্ত ও সর্বশেষ উদ্দেশ্য হলো, আপন সত্তা দিয়ে কোনো মুসলমান এমনকি কোনো মানুষের যেন কোনো ধরনের কষ্টের সম্মুখীন না হতে হয়। মহানবী (সা.) ইসলামি জীবনব্যবস্থার এই নীতিকে চূড়ান্তভাবে অন্তর্নিহিত করার জন্য হাদিসে এই বাক্য ব্যবহার করেছেন। ‘প্রকৃত অর্থে মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত-মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।

ইসলাম দেড় হাজার বছর ধরে উদারতা, মানবিক মূল্যবোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতার বাণী প্রচার করে আসছে। এতে আজ বিশ্বব্যাপী ইসলাম জীবন্ত আদর্শরূপে বহু জাতি-গোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজে নিজের ভীত মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করে যে চুক্তি করলেন, তা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান। ‘মদিনা সনদ’ নামে খ্যাত এ সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অপরাধের জন্য ব্যক্তি দায়ী হবে, সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। মদিনা প্রজাতন্ত্রকে পবিত্র ঘোষণা করা হলো। রক্তপাত-জুলুম নিষিদ্ধ করা হলো। ’

কোনো ধর্মকে কটাক্ষ, অপমান ও ব্যঙ্গ করা ইসলাম অনুমোদন করে না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ইসলামে জায়েজ নেই। কোনো ঈমানদার ব্যক্তি অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা করতে পারে না। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মধ্যে পাস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা ও সদ্ব্যবহার ইসলামের অনুপম শিক্ষা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা আমাদের প্রতিবেশী। আত্মীয়-অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। তাদের গালি-কটাক্ষ না করার জন্যও মহান আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে।

মহানবীর ২৩ বছরের নবুওয়তি জীবনে অমুসলিমদের উপাসনালয়ে আক্রমণ বা তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনেছেন। সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।