পবিত্র কাবা বিশ্বের মুসলমানদের সম্মেলনস্থল। ঐক্যের প্রতীক।
শুধু মানুষ নয়, কাবার হেরেমে প্রবেশকারী জীব-জন্তুরা পর্যন্ত নিরাপদ। সেখানকার পশু-পাখি হত্যা করা জায়েজ নেই। এমনকি এখানে শিকারীকে প্রাণীর সন্ধান দেয়াও অন্যায়। এটা করলে জরিমানা হিসেবে দম (কোরবানি করা) আবশ্যক হয়।
কাবাঘরের বরকত জাগতিক ও আধ্যাত্মিক। আল্লাহতায়ালা কাবাকে দ্বীনের প্রতীক বানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সম্মানিত কাবাকে মানুষের দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার বস্তু বানিয়েছেন। ’ -সূরা মায়েদা: ৯৭
হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, মানুষ যতদিন এ ঘরের হজ করবে এবং তার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করবে, ততদিন তারা দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আল্লাহতায়ালা কাবার প্রাঙ্গণে এমন কিছু ইবাদত রেখে দিয়েছেন যা অন্য কোথাও করা যায় না। যেমন হজ ও উমরা। তাছাড়া কাবার প্রাঙ্গণে ইবাদতের সওয়াব অন্য জায়গার চেয়ে অনেক বেশি।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক ওয়াক্ত নামাজ অন্য জায়গার এক লাখ রাকাত নামাজের সমতুল্য। ’
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কাবাঘরের ওপর প্রতিদিন ১২০টি রহমত বর্ষিত হয়। তাওয়াফকারিদের জন্য ৬০টি। নামাজিদের জন্য ৪০টি এবং এর প্রতি দৃষ্টিকারীদের জন্য বিশটি। -সুনানে বায়হাকি
কাবাঘরের প্রতি দৃষ্টিপাত করাও ইবাদত। সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব, ইবরাহিম নাখয়ি, আতা, তাউস প্রমুখ তাবেয়ির মতে কাবাঘরের প্রতি দৃষ্টি করলে গোনাহ ঝড়ে যায় এবং নফল ইবাদত করার সওয়াব অর্জিত হয়। হজরত আলী (রা.) বলেন, কাবার প্রতি দৃষ্টিপাত করা খাঁটি ঈমানের লক্ষণ।
কাবাঘরের উসিলায় আল্লাহতায়ালা মক্কাবাসীকে শত্রুর আক্রমণ থেকে নিরাপদে রেখেছেন সবসময়। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না, আমি মক্কাকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চারপাশে যারা রয়েছে, তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। তবে কি তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করবে?’ -সূরা আনকাবুত: ৬৭
আদিকাল থেকেই এ ঘরের ইবাদত ও সম্মান অব্যাহত। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যতদিন পর্যন্ত কাবাঘরের যথাযথ সম্মান করা হবে, ততদিন মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকবে। আর যখন তার সম্মান ছেড়ে দিবে তখন ধ্বংস হয়ে যাবে। দাম্বিক, অহংকারী আবিসিনিয়ার বাদশাহ আবরাহার ধ্বংসের কাহিনী সবারই জানা। পবিত্র কাবা ভেঙে দেওয়ার জন্য বিরাট বাহিনী নিয়ে আসা আবরাহাকে আল্লাহতায়ালা ক্ষুদ্র পাখির মাধ্যমে ধ্বংস করেছেন।
জাহেলিযুগে মক্কাবাসী মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকলেও তারা কাবাকে যথেষ্ট সম্মান করতো। তারা কাবার রবের নামে শপথ করতো। আরব কবিরা কাবার দেয়ালে কবিতা টানিয়ে তার সম্মান প্রদর্শন করতো। কাবার চারপাশে তওয়াফ ও হজ-উমরা সবই তারা পালন করতো। এমনকি ভিনদেশ থেকে আগত হাজিদের খানা-পিনার ব্যবস্থা করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে। এটাকে তারা পরম সৌভাগ্যের বিষয় বলে মনে করত।
কাবাঘরের চারপাশে রয়েছে বরকত ও কল্যাণের বহু নিদর্শন। মাকামে ইবরাহিম, মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ, মিজাবে রহমত, হাতিম, মাতাফ, রুকনে ইয়ামানি প্রত্যেকটি বরকতের প্রতীক এবং এসব স্থানে দোয়া কবুল হয়। তাইতো মুমিন হৃদয়ে বারবার ভেসে ওঠে কাবার ছবি। প্রাণের টানে বিশ্বের নানাপ্রান্তের মুসলমান প্রতি বছর ছুটে চলেন কাবার পানে। এটি কাবার বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যও বটে। আধুনিক জগতের শ্রেষ্ঠতম কোনো মনোরম দৃশ্য বা পর্যটনের স্থান দু’একবার দেখলেই মানবমন পরিতৃপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কাবাঘরে না আছে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, না আছে চিত্তাকর্ষক কোনো বস্তু, তবুও সেখানে পৌঁছার ব্যাকুল আগ্রহ মুমিনের হৃদয়ে অবিরাম ঢেউ খেলতে থাকে। সে আগ্রহে কখনও ভাটা পড়ে না।
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, কাবাঘরের জিয়ারত করে কেউ পরিতৃপ্ত হয় না। বরং বারবার জিয়ারতের অধিকতর বাসনা নিয়ে ফিরে আসে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি কাবাঘরকে মানুষের প্রত্যাবর্তনস্থল ও শান্তির আধার করেছি। ’ -সূরা বাকারা: ১২৫
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** হে আল্লাহ! পবিত্র হজের জন্য আমাদের কবুল করো
** এবার হজ পালনে যাচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫৬ হাজার ভারতীয়
** মদিনা শরিফে আল্লাহর নাম সংবলিত প্রদর্শনীতে হাজীদের ভিড়
** প্রাচীন ও বৃহৎ কোরআনের প্রদর্শনী চলছে মসজিদে নববীর আঙিনায়