ইসলামের আগমন হয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাব হয়েছিল মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে।
ধনবান হলেই নামাজের সামনের কাতারে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। একজন ফকির আর আমির উভয়ই নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সমান অধিকার ভোগ করেন। ফকির যদি আগে আসেন তাহলে তিনিই সামনের কাতারে দাঁড়াবেন। পক্ষান্তরে শাসক দেরিতে আসলে শাসক বলেই সামনের কাতারে দাঁড়ানোর বিধান নেই ইসলামে। তাকে পেছনের কাতারেই দাঁড়াতে হবে।
ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ও মানবেতিহাসের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হজেও মানবাধিকারের চর্চা হয় বাস্তবভাবে। আদিকাল থেকেই শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গের দ্বন্দ্ব চলে এসেছে। শুধু কালো হওয়াকেই অপরাধ হিসেবে দেখার নজির পৃথিবীতে নতুন নয়। যারা মানবাধিকারের জন্য চিৎকার করে পৃথিবী কাঁপিয়ে দিচ্ছেন- তাদের দেশেও শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গের দ্বন্দ্ব মেটেনি এখনও। খোদ মার্কিন মুল্লুকে কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও শুধু কালো হওয়ার অপরাধে অনেক কৃষ্ণাঙ্গকে নিগ্রহের শিকার হতে হয়। একটা সময় পর্যন্ত আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া ও পাবলিক গাড়িতে উঠা এমনকি ভালো রেস্টুরেন্টে প্রবেশের অধিকার ছিলো না। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৯৬৩ সালের ১৮ আগস্ট মার্টিন লুথার কিং ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সমাবেশে প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেন, কৃষ্ণাঙ্গরাও মানুষ, তাদের সব সামাজিক অধিকার আছে। কিন্তু মার্টিন লুথার কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলারও প্রায় দেড় হাজার বছর আগে প্রিয়নবী (সা.) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বর্ণবাদী বৈষম্যকে সমূলে উৎপাটনের ঘোষণা দিয়ে বর্ণবাদের মূলে আঘাত করেন।
এক লাখ চব্বিশ হাজার সাহাবির সামনে সেদিন তিনি ঘোষণা করেছিলেন- সার্বজনীন মানবাধিকারের সনদ। সাহাবি হজরত আবদুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মানবাধিকারের শাশ্বত ঘোষণা হিসেবে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত ঐতিহাসিক ওই ভাষণের চুম্বকাশ ছিলো- ‘আজ থেকে বংশগত কৌলিন্য বিলুপ্ত হলো। কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। যে ব্যক্তি স্বীয় কাজের দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে, তারাই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাবান। -সহিহ মুসলিম: ১/৩৯৪
নবী করিম (সা.) হজের সমাবেশে এমন ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই থেকে হজ মানবাধিকারের স্মারক হয়ে আছে। ওই ঘোষণার পর অবসান ঘটে বর্ণ প্রথার। হজের ড্রেসকোডও প্রতি বছর আমাদেরকে বিশ্বনবীর সেই ঘোষণার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। হজ ও উমরায় শাসক-শাসিত, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ সবাই আভিজাত্য ভুলে নিজেকে ইহরামের অভিন্ন সাদা পোশাকে জড়িয়ে একাকার হয়ে যায়। প্রেসিডেন্টের পোশাকেরও আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন- একই বাক্য উচ্চারণ করতে হয়। সাদা-কালোর পোশাক আর হজের আমলের অভিন্নতা- এভাবেই সাম্যবাদের কথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় হজ মানবাধিকারের মহা স্মারক হয়ে থাকার বিষয়টি।
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** হে আল্লাহ! পবিত্র হজের জন্য আমাদের কবুল করো
** এবার হজ পালনে যাচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫৬ হাজার ভারতীয়
** মদিনা শরিফে আল্লাহর নাম সংবলিত প্রদর্শনীতে হাজীদের ভিড়
** প্রাচীন ও বৃহৎ কোরআনের প্রদর্শনী চলছে মসজিদে নববীর আঙিনায়
** প্রতিদিন ১২০টি রহমত বর্ষিত হয় পবিত্র কাবাঘরে
** নবীর কদম মোবারকের স্পর্শে ধন্য মদিনার মাটিতে রয়েছে অজস্র বরকত
** হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি