মুমিনের অন্তরের সঙ্গে পবিত্র কাবার সম্পর্ক অকৃত্রিম। কোটি কোটি মুসলমান পবিত্র কাবা জিয়ারতের জন্য আল্লাহর ডাকের অপেক্ষায় থাকেন জীবনভর।
হজের মৌসুম এলে নিয়ম করে হাজিদের দুর্ভোগের নানা খবর শিরোনাম হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে হাজিদের ভোগান্তি এবং এজেন্সিগুলোর প্রতারণার ভয়ঙ্কর দৃশ্য ফুটে ওঠে। হজসেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের লোকদের দরুন হাজিদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। হজ ক্যাম্পে হাজিদের কেউ সাত দিন কেউ পাঁচ দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন কাঙ্খিত ফ্লাইটের।
পবিত্র হজ পালনের প্রাক্কালে আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। হজ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুটি কয়েকজনের লোভী মানসিকতার জন্য হজযাত্রীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়- সেটা দুঃখজনক। হজসেবার সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতারণা করে, ওয়াদার বরখেলাফ করে নানা কৌশলে দুনিয়ার আইন-আদালতকে ফাঁকি দিলেও অবশ্যই তাদেরকে দাঁড়াতে হবে পরকালের কাঠগড়ায়।
ওয়াদাখেলাফিদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ তাকে পরাজিত করবোই। তাদের বিরুদ্ধে বাদী হবো। প্রথমত যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করলো। ’ –সহিহ বুখারি: ২/৭৭৬
এ সব মানুষ দুনিয়াতে যতই তারা নিজেদের হাজিদের খাদেম হিসেবে পরিচয় দিক- হাশরের ময়দানে তারা নবীজির উম্মত হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমার দলের নয়। ’ –সহিহ মুসলিম: ১/৬৯
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘মুনাফিকের আলামত হলো- সে কথা বললে মিথ্যা বলবে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করবে আর আমানতে খেয়ানত করবে। ’ –সহিহ বুখারি: ১/২১
হজ এজেন্সির লোকগুলো সাধারণত হজযাত্রীদের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে প্রতারণা করে। তাদের এমন আচরণ প্রসঙ্গে আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছুই নেই যে, তুমি এমন ব্যক্তির সঙ্গে মিথ্যার আশ্রয় নেবে, যে তোমাকে বিশ্বাস করে।
সামান্য সম্পদ উপার্জনের নেশায় যারা এমন কাজ করে- তারা আসলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি ডেকে আনে। কেননা হারাম পন্থায় উপার্জিত সস্পদ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির উদ্দেশ্য হবে কেবল দুনিয়া অর্জন, আল্লাহ তার কাজকে এলোমেলো বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। পেরেশানি সৃষ্টি করেন দেবেন। সম্পদের পাহাড় থাকলেও তার দু’চোখের সামনে দারিদ্র্য এনে দেবেন (‘আরো চাই আরো চাই’ প্রবণতা তাকে পাগল করে তুলবে)। অথচ পার্থিব সম্পদ সে ততটাই লাভ করতে পারবে, যতটা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত- আল্লাহতায়ালা তার সবকিছুকে পরিপাটি গোছালো করে করে দেবেন। তার জীবন সুশৃঙ্খল হয়ে ওঠবে। তার অন্তরে মুখাপেক্ষিহীনতা ঢেলে দেবেন। সে বিনাশ্রমে দুনিয়া অর্জন করবে। ’ -ইবনে মাজা: ২/১৩৭৫
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার গাজীপুর।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** হে আল্লাহ! পবিত্র হজের জন্য আমাদের কবুল করো
** এবার হজ পালনে যাচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক ১ লাখ ৫৬ হাজার ভারতীয়
** মদিনা শরিফে আল্লাহর নাম সংবলিত প্রদর্শনীতে হাজীদের ভিড়
** প্রাচীন ও বৃহৎ কোরআনের প্রদর্শনী চলছে মসজিদে নববীর আঙিনায়
** প্রতিদিন ১২০টি রহমত বর্ষিত হয় পবিত্র কাবাঘরে
** নবীর কদম মোবারকের স্পর্শে ধন্য মদিনার মাটিতে রয়েছে অজস্র বরকত
** হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি
** সাম্যবাদের কথাকে মনে করিয়ে দেয় হজ
** পবিত্র হজ হোক সেলফিমুক্ত
** চীন থেকে সাইকেল চালিয়ে হজে
** দিনাজপুরের হাজী মহিউদ্দিন পায়ে হেঁটে হজ পালন করেছেন