বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান মুসলমান ভোক্তাদের জন্য হালাল ফেস ক্রিম ও শ্যাম্পু উৎপাদন করছে। পশ্চিমা বাজারগুলোতে মুসলমান ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে- সম্প্রতি এমন এক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইউনিলিভার (Unilever), বিয়ের্সডর্ফ (Beiersdorf) এবং ল’ রেলের (L'Oreal) মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর বিশাল বাজার ধরে রাখতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে উৎপাদিত সকল খাদ্যপণ্যের গায়ে ‘হালাল অথবা হালাল না’- এ ধরনের লেবেল লাগানো থাকবে। এরপর যথাক্রমে ২০১৮ সাল থেকে টয়লেট্রিজ সামগ্রী ও ২০১৯ সাল থেকে ওষুধের গায়ে এ ধরনের লেবেল লাগানো হবে।
কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রসাধন সামগ্রী বিশেষ করে চুলে রং করার বিষয়টির ওপর তারা বেশি জোর দিয়েছে। কারণ, মধ্যবিত্ত মুসলিম নারীদের মধ্যে চুলে রং করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে, তাই তারা এ ধরনের পণ্যকে আগে হালাল করবে, যাতে মুসলিম নারী ভোক্তাদের আর দ্বিধা না থাকে।
ইন্দোনেশীয় মুসলিম নারী ভোক্তাদের উদ্দেশ্য করে কোম্পানিগুলো এ সিদ্ধান্ত নিলেও তারা মনে করে, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়ার মতো অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে পারবে।
মালয়েশিয়ায় স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে হালাল প্রসাধন সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। মালয়েশিয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি অনুমোদন নিতে হয় যে, ইসলামি শরিয়া আইন মোতাবেক তারা এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। ইসলাম যা অনুমোদন করে না, সেরকম কোনকিছু এসব পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে না।
কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ প্রস্তুতকারকরা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে আর্থিক চাপের চেয়ে প্রশাসনিক চাপটা অনেক বেশি থাকবে। কারণ, কোনো মতে যদি ভুলভাল হয়ে যায় তাহলে কোম্পানির সুনাম নিয়ে টান দেবে। অতএব হালাল পণ্যের যথার্থ মান বজায় রাখাটা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
জার্মান কোম্পানি দ্রিক ম্যাম্প (Dirk Mampe) জানায়, বিশ্বের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে এসব পণ্যের চাহিদা অব্যাহত থাকবে এবং ব্যবসার স্বার্থে তা উৎপাদনও করতে হবে। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে তাদের উৎপাদিত ১৪৫টি পণ্যের গায়ে হালাল লেবেল লাগিয়েছে। তবে এ জন্য মূল্যের কোনো হেরফের করেনি প্রতিষ্ঠানটি। তারা বলছে, হালাল পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, তাই তাদের উৎপাদন সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
বিশ্ব জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মুসলিম। এ পর্যন্ত বিশ্বে ১১ শতাংশ হালাল বাজারের চাহিদা মেটাতে পেরেছে এসব কোম্পানি। বাজার মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান টেকনাভিও (TechNavio) জানায়, হালাল সামগ্রী বিক্রি প্রতিবছর ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ফরাসি কোম্পানি ল’ রেল ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় হালাল পণ্য প্রস্তুত কারখানা স্থাপন করেছে। এসব পণ্য ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে গার্নিয়ার ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ ও ত্বক ফর্সা করার ক্রিম বেশি চলছে।
ইউনিলিভার ইন্দোনেশিয়ায় শীর্ষ দশটি সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধন সামগ্রী বাজারজাত করে থাকে। মুসলিম ধর্মীয় মূল্যবোধ মাথায় রেখে কোম্পানিগুলো এসব পণ্য প্রস্তুত করে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা এখন ভাবছে, অন্যান্য সংস্কৃতি ও জাতিগত বোধ মাথায় রেখে কি ভাবে নির্দিষ্ট বাজারে প্রবেশ করা যায়। ইউনিলিভারের কর্মকর্তা এলান জোপ বলেন, তাদের পণ্যের ওপর মুসলিম নারীদের আস্থা আছে।
-রয়টার্স অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএইউ/