আল্লাহতায়ালার জন্য কোনো কিছু উৎসর্গ করার নাম কোরবানি। আর্থিক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
কোরবানির মূল শিক্ষা হচ্ছে- আত্মত্যাগ। কোরবানির পশুর গোশত আমাদের চারপাশের অভাবী ভাই-বোনদের ঘরে দিয়ে আসার মাধ্যমে সেই আত্মত্যাগের চর্চা করতে হয়। কিন্তু সমাজের অনেকে কোরবানির মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় করলেও আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কোরবানির গোশত না দিয়ে সারা বছরের গোশতের প্রয়োজন মেটাতে পুরোটাই ফ্রিজে রেখে দেন। এটা কোরবানির শিক্ষার পরিপন্থী কাজ।
আমাদের দেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। যারা সাধারণত গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য রাখেন না। অভাবী প্রতিবেশীদের ক্ষুধার্ত রেখে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে নিজের ফ্রিজে গোশত রেখে দেওয়া কোরবানির শিক্ষা নয়। কেননা আল্লাহতায়ালা প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের প্রয়োজন পূরণ করা সবার ওপর আবশ্যক করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। মাতাপিতার সঙ্গে সৎ ব্যবহার করো। নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের কৃতদাসের ওপর ও সদয় ব্যবহার করো। ’ -সূরা নিসা: ৩৬
আমাদের প্রিয়নবী (সা.) প্রতিবেশীদের অধিকারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি ঘরে একটু ভালো তরকারি রান্না করলেও তা প্রতিবেশীর ঘরে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তরকারি রান্না করার সময় তোমরা একটু বেশি ঝোল বেশি দেবে, যেন প্রতিবেশিকেও কিছু দিতে পার। ’ -সহিহ মুসলিম
যদিও কোরবানির পুরো গোশত নিজের পরিবারের জন্য রেখে দিলে কোরবানি আদায় হবে; কিন্তু প্রতিবেশী ও অভাবীদের প্রতি তার যে কর্তব্য রয়েছে সেটা; পালন না করার কারণে সেই কোরবানি দাতা মারাত্মকভাবে গোনাহগার হবেন।
কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে (প্রতিবেশীকে কিছু না দিয়ে) নিজে পেট ভরে খায়। ’ -সহিহ বোখারি
প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে কোনো প্রতিবেশী যদি কাফেরও হয় তবু তাকে কোরবানির গোশত দেওয়ার বৈধতা দিয়েছে ইসলাম। এমনকি কোরবানির গোশত রান্না করেও খাওয়ানো যাবে তাকে। হজরত মুজাহিদ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার হরজত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর পরিবারে একটি ভেড়া কোরবানি করা হলো। তিনি (আবদুল্লাহ) এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে কোরবানির গোশত দিয়েছ? কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশির প্রতি সদাচারণের ব্যাপারে এতটাই তাগিদ দিচ্ছিলেন যে, আমার মনে হচ্ছিল প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারে অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন। ’ -জামে তিরমিজি
পুরো গোশত নিজের জন্য রেখে দেওয়ার আগে আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার, যদি এখনও কোরবানির জবাইকৃত পশু খোলা ময়দানে রেখে আসার হুকুম থাকতো এবং তা আকাশ থেকে আগুন এসে ভস্ম করে ফেলত- তাহলে কি আমরা গোশত ফ্রিজ ভরে রাখতে পারতাম?
বস্তুত ইসলাম ত্যাগের ধর্ম। আমাদের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকা সত্ত্বেও আমরা পেট ভরে খাই, অপচয় করি। অথচ ইতিহাসের পাতাগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের একে অন্যের প্রতি ত্যাগের দৃষ্টান্তে ভরপুর।
সেই ত্যাগের শিক্ষা বাস্তবায়নের এক পরম সুযোগ আসে কোরবানিতে। কোরবানির দিন কোরবানি দাতাদের হাতের দিকে অভাবীরা তাকিয়ে থাকেন। তাই, আমাদের উচিত প্রতিযোগিতা করে নিজের জন্য কোরবানির গোশত না রেখে তা প্রতিবেশী ও অভাবীদের দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের তওফিত দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬
এমএইউ/
আরও পড়ুন>>
** কোরবানির আগে-পরে কি করবেন, কি করবেন না
** কোরবানির প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে কিছু জরুরি কথা
** বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ১২ সেপ্টেম্বর!
** পবিত্র জিলহজ মাসের আমলসমূহ
** পবিত্র কোরবানি ও ঈদুল আজহা বিষয়ক কয়েকটি হাদিস
** কোরবানি সংক্রান্ত অতি প্রয়োজনীয় কিছু মাসয়ালা
** কোরবানির পশু বিষয়ক জরুরি মাসয়ালা
** পবিত্র কোরবানির ইতিহাস ও ফজিলত
** লোক দেখানোর জন্য নয়, কোরবানি হোক আল্লাহপ্রেমে