ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নদী আল্লাহতায়ালার অশেষ নিয়ামত

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
নদী আল্লাহতায়ালার অশেষ নিয়ামত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এবারের বিশ্ব নদী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সুস্থ নদী, সুস্থ নগর। ’ ছোট্ট এই স্লোগানটি ব্যাপক অর্থবোধক।

বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে। কারণ, আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে নানাবিধ কাজের সুবিধার প্রেক্ষিতে পৃথিবীর বুকে অসংখ্য খাল-বিল, নদী-নালা ও সাগর-মহাসাগরের ব্যবস্থা করেছেন। এসব জায়গা থেকে মানুষ নিত্যদিনের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, অতীতের বড় বড় সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছিল নদী-তীরকে ঘিরেই। যেমন- সিন্ধুনদ, মিসরের নীলনদ এবং ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় সভ্যতা। ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়।

একদা নদীই ছিলো বাংলাদেশের প্রাণ। নদীকে কেন্দ্র করেই তো সৃষ্টি হয়েছে চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলার রাজধানী আজকের ঢাকার ইতিহাস। শুধু ঢাকা নয় বাংলাদেশের যত বড় শহর-বন্দর ও নগর দেখতে পাই- তার সবগুলো এই নদীরই সন্তান। নদীকে কেন্দ্র করেই জমে উঠেছিল সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, স্থাপিত হয়েছিল বিভিন্ন কল-কারখানা।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী বাংলাদেশের প্রাণ। নদীর জন্যই এদেশ এত উর্বর, এত সবুজ। নদী বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য একটি অপরিহার্য নিয়ামক। এদেশের জলবায়ুর ওপর নদ-নদীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এসব নদ-নদী মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে।

নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার প্রচুর মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম। এমনকি ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রেও এই নদী পথ ব্যবহার করেই প্রাচীন যুগের ইসলাম প্রচারকরা বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেছেন। এক কথায় এদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রচনাসহ শিল্পোন্নয়ন, বাণিজ্যের উন্নয়ন, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান এবং কৃষির উন্নয়নে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এ ছাড়া উপকূলভাগের পরিবহন এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যেও নদীর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে নদী, উপনদী ও শাখা নদী মিলিয়ে মোট নদীর সংখ্যা ২৩০টি। তন্মধ্যে ১৭৫টি নদীর অবস্থা শোচনীয়।


ইসলাম একটি কল্যাণকর পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একটি প্রকৃতিজাত ধর্ম। আর এ কারণেই ইসলামকে স্বভাবধর্ম বলা হয়। মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি ও চিরায়ত সত্তার মধ্যে ইসলাম অস্তিত্ববান। প্রকৃতি প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ও পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের সঠিক ও প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি কোরআনে কারিমে বিবৃত হয়েছে। এ মহান গ্রন্থে নদীর কথাও উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ খেতে পার, তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযানগুলোকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর। আর তিনি পৃথিবীর ওপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনও যেন তা তোমাদের নিয়ে হেলেদুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার। আর তিনি নির্ণায়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন এবং তারকা দ্বারাও মানুষ পথের নির্দেশ পায়। ’ -সূরা আন নাহল : ১৪-১৬

উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি কয়েকটি নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। সে নিয়ামতের অন্যতম হলো- পানি ও প্রবহমান নদী। শুধু এখানেই নয়, কোরআনে কারিমের আরও বহু জায়গায় আল্লাহতায়ালা নদী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নদী প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা নমলের ৬১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনিই পৃথিবীকে করেছেন বসবাস উপযোগী এবং এর মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। ’

কোরআনে কারিমের সূরা যুমারের ২১ নম্বর আয়াতে আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি কি দেখ না আল্লাহপাক আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর ভূমিতে স্রোতরূপে তা প্রবাহিত করেন এবং তা দিয়ে বিচিত্র বর্ণের ফসল উৎপাদন করেন। ’

সম্প্রতি প্রকাশিত এশিয়ান ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-১৬ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মাটির ওপরের ও নিচের দু’ধরনের পানির অবস্থাই খারাপ। ’ আসলেই অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। রাজধানীর চারদিক দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো পয়োঃ ও রাসায়নিক বর্জ্যে এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে, এসব নদীর পানি অনেক আগেই ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে। তুরাগ, বালু, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা রীতিমতো বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য নগরী ও শিল্পাঞ্চলের আশপাশের নদী-জলাশয়ও একই পরিস্থিতির শিকার।

বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি মানুষের জন্য যেমন অপরিহার্য তেমন জীবজন্তু, বৃক্ষলতা, ফসলের জন্যও অপরিহার্য। দূষিত পানি রোগ-ব্যাধির প্রধান কারণ। এটা মানুষের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি জীবজন্তু, বৃক্ষলতা ও ফসলের ক্ষেত্রেও সত্য। বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। পানি নিরাপত্তার অভাবে যে কোনো দেশের তা যত বড় অর্থনীতিই হোক, ভেঙে পড়তে বাধ্য। বিশুদ্ধ পানি ছাড়া সবকিছুই অচল। এমতাবস্থায়, প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানির সংস্থান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দাবি করে। এদিকে নজর দেওয়া এখন সময়ের বড় দাবি।

আগামী পর্বে: নদীতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।