নদীতে রয়েছে আল্লাহতায়ালার কুদরতের বহু নিদর্শন। এর অন্যতম এক নিদর্শন হলো- নদী ও সাগরের মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মধ্যে মিশ্রণ না হওয়া।
কোরআনে কারিমের নিম্নোক্ত আয়াতেও এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। সেখানে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি সে সত্তা যিনি দু’সাগরের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন। ’- সূরা নমল : ৬১
আরও পড়ুন: নদী আল্লাহতায়ালার অশেষ নিয়ামত
পবিত্র কোরআনে কারিমের উপরোক্ত বর্ণনার বাস্তব চিত্র বিভিন্ন নদী বা সাগরে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মনির খাশুকজি বলেন, ‘আমি বাহরাইন উপসাগরের জলস্রোতে এ রকম একটি স্থান দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম। নৌকায় চলতে চলতে সেই বাঁধ (প্রাচীর) বরাবর গেলাম। খুব কাছে থেকে উভয় দিকের পানি মুখে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলাম। পরীক্ষায় দেখা গেল, উভয় দিকের পানি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কী আশ্চর্য! একটার পানি লোনা, বিস্বাদ কিন্তু অপরটির পানি সুপেয়, মিষ্ট ও তৃষ্ণানিবারক। সমুদ্রের মাঝে এটা এক বিস্ময়কর কুদরত, যা মহান আল্লাহতায়ালার অলৌকিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আধুনিককালের বিজ্ঞানীরা এতে বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছেন। কোরআনের বিশুদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। ’
বস্তুত দুই সমুদ্রের মিলন সম্পর্কিত বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় সঠিকত্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ‘মারাজাল বাহরাইন’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। আরবি ‘মারাজা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্বাধীনভাবে প্রবাহিত করা, ছেড়ে দেওয়া। অর্থাৎ দুই সমুদ্রের পানি একই সঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে কিন্তু মাঝখানে আছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর, যার ফলে তারা পরস্পর মিশ্রিত হতে পারছে না।
দুই সমুদ্রের মিলন দৃশ্য বাংলাদেশেও দেখা যায়। নদীপথে চাঁদপুর যেতে ‘রাজবাড়ী বহর’ নামক স্থান পড়ে। এ স্থানে দেখা যায়, পদ্মা ও মেঘনার পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে মিশে যাচ্ছে না। পদ্মার পানি ঘোলাটে আর মেঘনার পানি কুচকুচে কালো। অনুসন্ধানী হলে সেখানে গিয়ে বাস্তবে এ দৃশ্য দেখে আসতে পারেন। এ ছাড়াও বরিশালের ‘বলেশ্বর নদী’ থেকে দু’টি ধারা প্রবাহিত হয়েছে। এক ধারার পানি লোনা ও বিস্বাদ এবং অন্য ধারার পানি মিষ্ট ও সুস্বাদু।
আসলে এসবই আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সমান্তরালে দু’সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও অন্যটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুভের্দ্য আড়াল। ’ -সূরা ফোরকান : ৫৩
নদীতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন আরও কিছু হলো- নানা প্রজাতির, নানা স্বাদের মাছ, প্রবাল, নানা ধরনের বালু, ঝিনুক ও শামুকসহ অজস্র জলজসম্পদ। এগুলো মানুষের জীবিকার মাধ্যমও বটে।
মানবেতিহাসের সূচনা থেকেই মানুষ জীবিকার সন্ধানে নদী বা সাগরের শরণাপন্ন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। উন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেসব দেশ নদী-সমুদ্রকে যত বেশি ব্যবহার করতে পেরেছে, সে দেশ তার অর্থনীতিকে তত এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল ও শক্তিশালী করতে নদী বা জলজসম্পদকে কাজে লাগানো জরুরি।
আগামী পর্বে: নদী ও জলজসম্পদ প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
এমএইউ/