তুরস্কের আকসারা শহরের আদালাত ও ইবরাহিম নামের দুই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাই-বোন দৃঢ় সংকল্প, কঠোর অধ্যবসায় ও ইচ্ছার সুবাদে অতি অল্প সময়ে পবিত্র কোরআন পাঠ শেখা ও তেলাওয়াত করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আলোচিত এই ভাই-বোনের কীর্তির কথা এখন আকসারা এলাকায় অধিবাসীদের মুখে মুখে।
পবিত্র কোরআন শেখার জন্য জন্মান্ধ এই দুই ভাইবোনের অনেক আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই তারা সর্বপ্রথম ব্রেইল পদ্ধতিতে আরবি বর্ণমালা পড়া শেখেন। আরবি শেখার এক মাসের মাথায় তারা সহিহশুদ্ধভাবে কোরআন পড়া শিখে ফেলেন।
সুন্দর ও সহিহশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শেখা শেষে পবিত্র কোরআন হেফজের (মুখস্থ) প্রতি এই দুই ভাই-বোনের আগ্রহ রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোরআন হেফজ করা শুরুও করে দিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, খুব দ্রুততম সময়ের মাঝেই তারা সম্পূর্ণ কোরআন হেফজ (মুখস্থ) করতে সক্ষম হবেন।
পবিত্র কোরআন শেখার ব্যাপারে বোন আদালাত বলেন, আমি ও আমার ভাই ইবরাহিম নিয়মিতভাবে কোরআনের শিক্ষার ক্লাসে যাই। অবশ্য এজন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়েছে। তবে সব বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে আমরা কোরআন পড়া শিখেছি। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় কিছু।
বাধা প্রসঙ্গে আদালাত বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ক্লাসে এবং বাড়িতে ফিরতে আমাদের অনেক কষ্ট হতো, অনেক সময় হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যেতাম। এমন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা আমাদের ইচ্ছাপূরণের লক্ষ্যে দৃঢ়সংকল্প ছিলাম।
কোরআন শেখা প্রসঙ্গে আদালাত আরও বলেন, আমরা প্রথমে মনে করতাম আগামী এক বছরের মধ্যেও আমরা কুরআন পড়া শিখতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আমরা ব্রেইল বর্ণমালার মাধ্যমে পবিত্র কোরআন পড়া শিখে ফেলেছি। এটা আমাদের জন্য অতি আনন্দদায়ক।
দুই সন্তানের সফলতার প্রেক্ষিতে তাদের বাবা আবু আকরাম বলেন, আমরা কখনও অন্ধত্বকে জীবনের বাধা হিসেবে দেখিনি। আমাদের পরিবারের কেউই এটা ভাবে না। আমরা তাদের শিখিয়েছি, মানুষ যদি কোনো কিছুর প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাহলে অবশ্যই সে সফল হবে। অনেক সময় ভুল চিন্তা মানুষের অগ্রগতির বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যাদের পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে আমার এই বার্তা তাদের জন্য, কখনও সমাজ থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের দূরে রাখবেন না।
কোরআন পড়া শেখা ও মুখস্থের ব্যাপারে আদালাতের ভাই ইবরাহিম বলেন, কোরআন পড়া শেখা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে; তবে এটি অসম্ভব কিছু নয়। শারীরিক অক্ষমতার অজুহাতে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা থেকে দূরে থাকা ঠিক নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/