ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

মানবজীবনে নদী ও পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
মানবজীবনে নদী ও পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যে কোনো প্রকার ইবাদত করার আগে পবিত্রতা অর্জন করা প্রয়োজন। আত্মিক পবিত্রতার সঙ্গে সঙ্গে বাহ্যিক পবিত্রতাও আবশ্যক।

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ রয়েছে, ‘হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা যখন নামাজের জন্যে দাঁড়াবে- তোমরা তোমাদের (পুরো) মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত তোমাদের হাত দু’টো ধুয়ে নেবে, অতঃপর তোমাদের মাথা মাসেহ করবে এবং পা দু’টো গোড়ালি পর্যন্ত (ধুয়ে নেবে,) কখনও যদি (এমন বেশি) নাপাক হয়ে যাও (যাতে গোসল করা ফরজ হয়ে যায়), তাহলে (গোসল করে ভালোভাবে) পবিত্র হয়ে নেবে, যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়ো কিংবা তোমরা যদি সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ যদি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে অথবা যদি নারী সম্ভোগ করে থাকো (তাহলে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করো), আর যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও, (আর তায়াম্মুমের নিয়ম হচ্ছে, সেই পবিত্র) মাটি দিয়ে তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ করে নেবে; (মূলত) আল্লাহতায়ালা কখনও (পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে) তোমাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পাক-সাফ করে দিতে এবং (এভাবেই) তিনি তোমাদের ওপর তার নিয়ামতসমূহ পূর্ণ করে দিতে চান, যাতে করে তোমরা তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো। ’ -সূরা মায়িদা : ৬

আরও পড়ুন: নদী আল্লাহতায়ালার অশেষ নিয়ামত
এই দীর্ঘ আয়াত প্রমাণ করে যে, সব ধরনের ইবাদত-বন্দেগির জন্য আল্লাহ পবিত্রতাকে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন। বিশেষ করে নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত করতে অজু, গোসল, তায়াম্মুম ইত্যাদি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনকে শুধু ফরজ বা বাধ্যতামূলকই করা হয়নি, বরং অপবিত্র অবস্থায় ইবাদত করাকে কঠিন গোনাহের কাজ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অজু, গোসল, তায়াম্মুম করার জন্য প্রধানতঃ পানি ও মাটি ব্যবহৃত হয়। তবে শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য যেহেতু পানি ব্যবহৃত হয়- সেহেতু প্রথমে পানির বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা সম্বন্ধে সামান্য আলোচনা করা যাক।

আরও পড়ুন: নদীতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন
অতি প্রয়োজনীয় এবং জীবন ধারণের অন্যতম উপকরণ পানিকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য পানির উৎস যেমন নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। তিনি পানিতে আবর্জনা মলমূত্র ও বর্জ্য ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন।

‍হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা অভিশাপ আনয়নকারী তিন প্রকার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখো। তা হলো- পানির উৎসসমূহে, রাস্তা-ঘাটে ও বৃক্ষের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করা। ’ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র আরও বলেছেন, ‘তোমরা কেউ আবদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করে তাতে অজু করো না। ’ হাদিসে শরিফে ‘যে কূপ বহু বছর যাবৎ অকেজো হয়ে পড়ে আছে, তার পানি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ’ উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকেই অনুমান করা যায়- নদী ও পানির পবিত্রতা রক্ষায় ইসলাম কতোটা তৎপর।

আরও পড়ুন: নদী ও জলজসম্পদের অপব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ
নদীমাতৃক এলাকার অধিবাসী হওয়ায় পানির জন্য হয়তো আমাদের এখন তেমন একটা কষ্ট পোহাতে হচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা তো আর বলা যায় না। তাই এখনই আমাদের সাবধান হতে হবে পানি ব্যবহারে। কারণ বর্তমানে মানুষ যেভাবে যান্ত্রিক উপায়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে- তাতে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর যেভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব দেখা যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এ ব্যাপারে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ‘তোমরা (পানির ব্যবহারে) অপচয় করো না, যদিও তা প্রবহমান নদীর পানিও হয়। ’ এ হাদিস থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হলো, বাহ্যিকভাবে দেখা যায়- নদীর পানি ব্যবহার করলে যেখানকার পানি সেখানেই থাকে, সেখান থেকে পানি কমার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া নদী প্রবহমান হওয়ার কারণে পানির উৎস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি আসতে থাকে। তার পরও পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশ। এমনকি পবিত্র ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।

মানুষ এবং জীব জগতের বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় অবলম্বন হলো পানি। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। পানি দূষিত হলে- মাটি, বায়ু ও খাদ্যও দূষিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে পৃথিবীর ৬০ ভাগ পানিই দূষিত। ফলে রোগ-শোক, জ্বরা-ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ ও পশুপাখি। পানি দূষণের মূল কারণ হলো- নর্দমার ময়লা, কারখানার বর্জ্য পদার্থ, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র, কীটনাশকের মিশ্রণ প্রভৃতি। তাই আজ বিশ্বব্যাপী এ পানিকে বিশুদ্ধ রাখার জন্য জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব এখন মানুষকে রীতিমত উদ্বিগ্ন করে তুলছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান শতাব্দীতে দুনিয়ায় যদি বড় ধরনের কোনো যুদ্ধবিগ্রহ হয় তাহলে তা হবে বিশুদ্ধ পানির জন্য।

বস্তুত নবজাতক থেকে শুরু করে মৃত্যু পথযাত্রীদের জন্য পানির চাহিদা অনস্বীকার্য। পানির জন্য প্রত্যাশিত সব বয়সী মানুষ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পানির উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি পানির অপচয়রোধ ও পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বলেছেন। আল্লাহর দেওয়া পানি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত, যার সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণ প্রতিটি মানুষের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এ উপলদ্ধি থেকেই আজ বিশ্বব্যাপী দাবি উঠেছে নদী ও পানি দূষণমুক্ত রাখার। আমাদের বিশ্বাস, আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নেয়ামত নদী ও পানির অপচয়রোধ ও দূষণমুক্ত রাখতে দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণভেদে সবার প্রচেষ্টা হবে সমান।

আরেকটি কথা, যেহেতু সাড়া পৃথিবীতেই পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে নদীগুলোর দূরবস্থার জন্য। তাই নদীগুলোকে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরী। নদী খনন করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ নদীগুলোকে দখলমুক্ত করতে না পারলে, নদীর দূষণ বন্ধ না করলে- এক ভয়ানক মহাদুর্গতী বিশ্ববাসীর জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের বিশ্বাস, সম্মিলিতভাবে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করলে আলোচিত সমস্যার সমাধান সম্ভব।

মনে রাখতে হবে- কোনোভাবেই নদী, খাল-বিলের গতিপথ বন্ধ কিংবা বাঁধার সৃষ্টি করা যাবে না। এই সুন্দর ধরণীকে বাঁচাতে, নিজে বাঁচতে, অপরকেও বাঁচাতে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।