আটলান্টিক সাগরের তীর থেকে পামির মালভূমির সুউচ্চ ভূমি পর্যন্ত বিশাল বিস্তীর্ণ মুসলিম সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি একদিন রাতে তার কামরায় বসে সরকারি দলিল দস্তাবেজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন এ সময় তার প্রিয়তমা স্ত্রী কামরায় প্রবেশ করে বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! আমি কি আপনার সঙ্গে একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে আলাপ করতে পারি? খলিফা উত্তর দিলেন নিশ্চয়! বলে তিনি প্রদীপটি নিভিয়ে দিলেন এবং বললেন ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় প্রদীপ ব্যবহার ঠিক নয়। তিনিই খলিফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনে আবদুল আজিজ।
মিসরের গভর্নর আবদুল আজিজ ছিলেন তার পিতা । হিজরি ৬১ সাল মোতবেক ৬৮২ খ্রিস্টাব্দ মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার বাল্যকাল ও শিক্ষার সময় কাটে পবিত্র মদিনায়। পরবর্তী সময়ে তার চাচা খলিফা আবদুল মালেকের কন্যা ফাতেমাকে বিয়ে করেন এবং ৭০৬ খ্রিস্টাব্দ মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হন। অতঃপর উমাইয়া খলিফা সুলাইমান বিন আবদুল মালেক তাকে খেলাফতের উত্তরাধিকার নিযুক্ত করেন এবং তার মৃত্যুর পর ৭১৭ খ্রিস্টাব্দ তিনি খিলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হন।
যদিও উমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসনকাল খুবই স্বল্প ছিল (৭১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত); কিন্তু মুসলিম ইতিহাসে তা অবিস্মরণীয়। বলা হয়ে থাকে উমাইয়া খেলাফতের ৯১ বছর শাসনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় হলো তার যুগ ।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ.) বলেন, প্রতি শতাব্দীতে একজন মুজাদ্দিদ আগমন করেন। ইসলামের প্রথম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হলেন উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)। তিনি প্রচলিত খিলাফতের বিভিন্ন রীতিনীতির ব্যাপক পরিবর্তন করেন। সমগ্র মুসলিম জাহানে কঠোরভাবে শরিয়া ও ইনসাফভিত্তিক আইন বাস্তবায়ন করেন। জিজিয়া কর প্রথা রহিত করেন । সর্বোপরি মানবতার কল্যাণে আল্লাহর আইনের সর্ব্বোচ্চ প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আপসহীন। হাদিস শাস্ত্র সংরক্ষণ ও সংকলনের উদ্যোগে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক ও অন্যান্য প্রচলিত প্রথা ভেঙে কোরআন ও সুন্নাহর আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার উদ্যোগ তাকে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্যে ফেলে দেয়। ৭২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি খলিফাতুল মুসলিমীন উমর ইবনে আবদুল আজিজকে (রহ.) খাবারে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করা হয় । মৃত্যুশয্যায় তিনি তার হত্যাকারী সম্পর্কে অবগত হলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএইউ/