ইসলাম কন্যাসন্তানকে অভিহিত করেছে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যাসন্তান লালন-পালন করেছে, পুত্রসন্তানকে কন্যাদের ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাদেরকে উত্তম আদশ শিক্ষা দিয়েছে, তাদেরকে বিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে, সে জান্নাত লাভ করবে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথাও ঘোষণা করেছেন দ্বীপ্ত কণ্ঠে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, পুরুষেরা যা কিছু উপার্জন করে তার অংশ এবং মহিলারা যা উপার্জন করবে তার মালিকানা মহিলার। -সূরা আন নিসা: ৩২
একজন পূর্ণ বয়স্ক মুসলিম নারী, তিনি বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত- কারো সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই সম্পদের মালিক হতে পারেন, মালিকানা হস্তান্তরও করতে পারেন।
নারীর সম্মান রক্ষায় ইসলাম যৌতুক প্রথাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে তা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি উল্টো নারীকে দেনমোহর প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। দেনমোহর আদায় করা প্রত্যেক স্বামীর অবশ্য কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের নারীদেরকে তোমনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করাও বাধ্যতামূলক। ’ -সূরা আন নিসা: ৪
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে নারীকে ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকারও প্রদান করেছে ইসলাম। সূরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি ব্যবসাকে করেছি হালাল আর সুদকে করেছি হারাম। ’ এই আয়াতে ব্যবসা হালাল হওয়া এবং সুদ হারাম হওয়া নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।
হজরত রাসূলে কারিম (সা.)-এর স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) তৎকালীন আরবের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। সাহাবি আসমা বিনতে মাখরাও (রা.) আতর ব্যবসায়ী ছিলেন। একজন পুরুষ হালাল পন্থায় যেসব ব্যবসা করতে পারবে- নারীও তা করতে পারবে। তবে হালাল বস্তু ও হালাল পদ্ধতির ব্যবসার শর্তের সঙ্গে নারীর জন্য যোগ হবে পর্দার অলঙ্ঘনীয় শর্ত।
কোনো কোনো ধর্ম নারীকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেও ইসলাম উত্তরাধিকারে নারীর হিস্যা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করে দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং নারীদেরও অংশ আছে। তা কম হোক বা বেশি। (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত অংশ। ’ –সূরা আন নিসা: ৭
ইসলামে নারীর চাকরির অধিকারও রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত সাধারণভাবে যে কাজ বা পেশা পুরুষের জন্য বৈধ, তা নারীর জন্যও বৈধ। হজরত জয়নব (রা.) কুটির শিল্পে পারদর্শী ছিলেন। তিনি চামড়া পাকা করার কাজে দক্ষ ছিলেন। এ কাজে যে অর্থ উপার্জিত হতো তা তিনি আল্লাহর পথে ব্যয় করতেন। -সহিহ মুসলিম শরিফ
নারীর দৈহিক সামর্থ্যে সহজসাধ্য যে কোনো পেশায় নিয়োজিত হতে পারেন। তবে কঠোর শ্রমসাধ্য কোনো কাজ যেমন- খনির অভ্যন্তরে, লৌহজাত দ্রব্যাদি নির্মাণ ইত্যাদিতে নারীকে নিয়োজিত করা ইসলাম অনুমোদন করে না। মহিলাদের জন্য পর্দায় থেকে শিক্ষকতা, ডাক্তারীর মতো উপযোগী যেসব পেশায় শালীনতা, মর্যাদাবোধ ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে দায়িত্ব পালন করা যায়- এমন পেশার অনুমোদন দিয়েছে ইসলাম।
জরুরী কাজে নারী পর্দার সঙ্গে ঘরের বাইরে যাবে। হজরত খাদিজা (রা.) রাসূলে কারিম (সা.)-এর জন্য হেরা গুহায় খাবার নিয়ে যেতেন। রাসূলে কারিম (সা.) যখন সফরে যেতেন লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে একজন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন পুরুষ দায়িত্বপালন করে যে পরিমাণ অর্থ প্রাপ্ত হন- একজন নারী সে পরিমাণ কষ্ট করলেও তার মজুরী কম দেওয়া হয়। নামে মাত্র বেতনে তাদেরকে কাজের বুয়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা কিছুতেই ইসলাম অনুমোদিত নয়। এটা বৈষম্য, আর ইসলাম সব ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
ইসলামের নির্দেশনা হলো- নারীকেও সমান বেতন-মজুরি দিতে হবে। ব্যবসা, উত্তরাধিকার কিংবা চাকরির মাধ্যমে পাওয়ার পর নারী ওই সম্পদের নিয়ন্ত্রণকারীও। পুরুষ যেমন কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া নিজ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন, তেমনি নারীও কোনো প্রকারের বিধিনিষেধ ছাড়াই তার সম্পত্তির ব্যাপারে সব ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
চাকরি, ব্যবসা, উপহার, মোহরানার মতো সম্পদপ্রাপ্তির বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা থাকলেও তাদের সম্পদ ব্যায়ের বাধ্যতামূলক কোনো নারীর ওপর কোনো প্রকার আর্থিক দায়-দায়িত্ব চাপায়নি। নারীর অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্বের পুরোটাই পুরুষের ওপর ন্যস্ত। মেয়ে বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত তার ভরণ-পোষনের দায়িত্ব পিতার। বিয়ের পর স্বামীর। এরপর সন্তানের ওপর। একান্ত যদি কোনো মহিলা স্বেচ্ছায় সংসারে তার উপার্জিত অর্থ খরচ করে; তাহলে তা হবে অপূর্ব ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএইউ/