মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেই সর্বদা নিজেদের দোষ-ত্রুটিসমূহকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। কারণ কোনো মানুষই চায় না কোনোভাবেই তার মান-সম্মান ও মর্যাদা নষ্ট হোক।
যে সব কাজ কিংবা খারাপ অভ্যাস মানুষের দোষ-ত্রুটিকে প্রকাশ করে দেয় সেগুলোর অন্যতম হলো- অহমিকাবোধ। অর্থাৎ নিজের বড়াই করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষ ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়ে এবং এভাবে মানুষের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। আর এ কারণেই শান্তির ধর্ম ইসলামে ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যার মধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে, সে বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। ওই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, মানুষের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে আল্লাহকে ভয় করে এবং হক পথে থেকেও তা আদায়ের জন্য ঝগড়া-বিবাদে জড়ায় না।
ঝগড়া-বিবাদ অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ঝগড়া-বিবাদকারীকে প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ইসলামে। ঝগড়ার ফলে পারিবারিক, সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বিনষ্ট হয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক আলগা হয়ে যায়। ঝগড়াকারীকে কেউ ভালোবাসে না। ক্ষেত্র বিশেষ ঝগড়ার পরিণতি হয় মারামারি, খুনোখুনি ও মামলা। ঝগড়া-বিবাদ মূলত অশ্লীল কথার ছড়াছড়ি। তাই ইসলাম এসব থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- সব ধরনের ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে চলা। কেননা এ কারণে মানুষের অন্তর কলুষিত হয় এবং মুনাফেকি সৃষ্টি হয়। আর ঝগড়া-বিবাদ মানুষের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে শত্রুতায় পরিণত করে।
বিখ্যাত দার্শনিক শেখ সাদী বলেছেন, নির্বোধ এবং গম্ভীর লোকদের সঙ্গে ঝগড়া করো না। কেননা নির্বোধরা তোমাকে কষ্ট দেবে আর গম্ভীর মানুষ তোমার শত্রুতে পরিণত হবে। ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি ঝগড়া করে সে যেন শত্রুর অনিষ্ট থেকে নিজেকে সামলানোর জন্য প্রস্তুত হয়।
একজন সত্যিকারের মুসলমান সবসময় ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্ব-কলহ এড়িয়ে চলবেন। এটা ইসলামের দিক-নির্দেশনা। এটা আল্লাহর শেখানো এবং প্রদর্শিত পথ।
আসল শক্তিমান সেই ব্যক্তি যে ঝগড়া-বিবাদের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঝগড়া-বিবাদের মূলে রয়েছে ক্রোধ। ক্রোধান্বিত ব্যক্তি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে অনেক অনাকাঙ্খিত কিছুর জন্ম দেয়। এ জন্য ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বড় জিহাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৬
এমএইউ/