১. মহররম শব্দের অর্থ হলো- সম্মানিত বা মর্যাদাপ্রাপ্ত। সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বর্ণিত বছরের সম্মানিত ও বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত ৪ মাসের অন্যতম হলো- মহররম মাস।
২. এ মাসের একমাত্র বিশেষ আমল হলো- নফল রোজা পালন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের পর শ্রেষ্ঠ রোজা হলো- আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। -সহিহ মুসলিম: ১১৬৩
৩. মহররমের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। এ দিনটি হলো- মহররম মাসের বরং সারা বছরের সেরা তাৎপর্যপূর্ণ দিন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে (সা.) আশুরার দিনের মতো গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে অন্যকোনো দিনে রোজা রাখতে দেখিনি। -সহিহ বোখারি: ২০০৬, সহিহ মুসলিম: ১১৩২
৪. আশুরার উপলক্ষে কমপক্ষে দু’টি রোজা রাখার নির্দেশ। মদিনায় আগমনের পর যখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনে রোজার নির্দেশ দিলেন, তখন লোকেরা বলে উঠলো, এ দিনকে তো ইহুদি-খ্রিস্টানরা মর্যাদা দিয়ে থাকে। তিনি উত্তর করলেন, আগামী বছর এলে আমি ৯ তারিখেও রোজা রাখবো। অবশ্য পরবর্তী মহররম মাস আসার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন। -সহিহ মুসলিম: ২৬১৯
৫. আশুরার দিনে রোজার মর্যাদা। হজরত আবু কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট আমার আশা হলো- তিনি আশুরার দিনের রোজার বিনিময়ে এক বছরের পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেবেন। -সহিহ মুসলিম: ১১৬৩
৬. ইসলামের প্রথম ফরজ রোজা ছিলো আশুরার দিনের রোজা। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, ইসলাম পূর্বযুগে কুরাইশের লোকেরা আশুরার দিনে রোজা রাখতো। আল্লাহর রাসূলও এই দিনে রোজা রাখতেন। মদিনার আগমনের পর তিনি নিজে রোজা রাখার পাশাপাশি সবাইকে সেদিন রোজা রাখার নির্দেশ জারি করলেন। এরপর যখন রমজানের রোজার বিধান এলো, তিনি বললেন- যে ইচ্ছা আশুরারটা রাখবে যে ইচ্ছা রাখবে না। -সহিহ বোখারি: ৩৭৪৪
৭. আশুরার রোজাই একমাত্র নফল আমল, যার প্রতি শিশুদেরও উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত রুবাইয়্যি (রা.) বলেন, আশুরার দিন সকালে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ঘোষককে আনসারিদের পাড়ায় পাড়ায় এ মর্মে ঘোষণা করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন, যারা কিছু খেয়ে ফেলেছে তারা যেন দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকে। আর যারা রোজা রেখেছে তারা যেন সেটা পূর্ণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, সে কারণে আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে রোজা রাখাতাম। -সহিহ বোখারি: ১৬৯০
৮. আশুরার রোজা একটি নয়, দু’টি। ইবাদত-বন্দেগির বিষয়ে ইহুদি-খ্রিস্টানদের অনুকরণ নিষেধ। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখবে কিন্তু ইহুদিদের চেয়ে ভিন্নতর এবং ব্যতিক্রম করে রাখবে। অর্থাৎ (ওরা শুধু আশুরার দিন রাখে, তোমরা) তার আগে বা পরে আরেকটি রোজা যোগ করবে। -মুসনাদে আহমাদ: ১/২৪১, ইবনে খুজাইমা: ২০৯৫
৯. আশুরার দিনে রোজার রহস্য। এ দিনে হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইলকে আল্লাহতায়ালা ফেরআউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন, তারই শুকরিয়াস্বরূপ তিনি এ দিন রোজা রাখতেন। মদিনায় ইহুদিরাও তার অনুকরণে এ দিন রোযা রাখত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এটা জেনে বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরাই বরং মুসার অনুকরণের অধিক উপযুক্ত। এরপর থেকে তিনি রোজা রাখতেন এবং সবাইকে রোজার নির্দেশ দিয়েছেন। -সহিহ বোখারি: ১৯০০
১০. আশুরার দিনটি হজরত মুসা (আ.)-এর জন্য বিজয়ের দিবস হলেও কাকতালীয়ভাবে একই দিনে কারবালার নির্মম ঘটনাটিও ঘটেছিল। তাই বলে এ দিনকে শোকের দিন হিসেবে পালন করা উল্লেখিত হাদিসসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ দিনে রোজা না রেখে উল্টো মাতম করা, শোক মিছিল বের করা, নখ বা ছুরি দিয়ে নিজের মুখ-শরীর ক্ষত-বিক্ষত করা চরম ভ্রষ্টতা ও জঘন্য বিদআত।
আশুরার দিনে ভালো খাবার গ্রহণ করা সম্পর্কিত হাদিসটিও শুদ্ধতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক উপায়ে ইসলামের অনুকরণ করার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: ইসলাম প্রচারক, দাম্মাম ইসলামিক সেন্টার, সৌদি আরব
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এমএইউ/