আশুরা শব্দের অর্থ দশম দিবস। ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরা হিসেবে পরিচিত।
এ দিনের গুরুত্বের কারণে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিনে রোজা রেখেছেন এবং সাহাবাদের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সহিহ বোখারি শরিফের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে উম্মতের ওপর আশুরার রোজা ফরজ ছিল। পরে রমজানের রোজা ফরজ হলে এ দিনের রোজা নফলে পরিণত হয়। -সহিহ বোখারি: ২৬৮
তবে আশুরার রোজা নফল হলেও এর গুরুত্ব কমে যায়নি। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের রোজার পরে সর্বোত্তম রোজা হলো- আশুরার রোজা। তিনি আরও বলেছেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহতায়ালা এর দ্বারা পেছনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। -মিশকাত শরিফ: ১৭৯
ওলামায়ে কেরাম বলেন, গোনাহ মাফ দ্বারা সগিরা গোনাহ উদ্দেশ্য। কেননা কবিরা গোনাহ মাফের জন্য তওবা করা আবশ্যক। তবে যদি রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তওবা-ইস্তিগফারও করা হয় তাহলে সগিরা, কবিরা সব ধরনের গোনাহ মাফের আশা করা যায়।
আশুরা দিবসে নেয়ামতের শোকর আদায় করা কর্তব্য। কেননা পূর্ববর্তী মুমিন ও পয়গম্বরের প্রতি আল্লাহতায়ালার অনুকম্পা ও নেয়ামত প্রকারান্তরে আমাদের জন্যও নেয়ামত। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই নবী করিম (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম এ দিনে রোজা রেখেছেন।
আশুরাকে কেন্দ্রকরে সমাজে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। অনেকে মহররম মাসকে পালন করে থাকে শোকের মাস হিসেবে। তারা হজরত হুসাইন (রা.) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে মর্সিয়া ও মাতম করে। মাথা, পিঠ ও বুকে অনবরত আঘাত করে নিজেকে রক্তাক্ত করে। ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। এভাবে মাথা ও বুক চাপড়ানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কারো মৃত্যুতে গালে হস্ত চাপড়ায়, পোশাক ছিড়ে ফেলে এবং জাহেলি লোকদের ন্যায় বিলাপ ও মর্সিয়া করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। ’ –সহিহ বোখারি
৬১ হিজরির আশুরার দিনে কারবালার প্রান্তরের হৃদয়বিদারক শাহাদত নিঃসন্দেহে কিয়ামত অবধি নবীভক্ত উম্মতের জন্য বেদনাদায়ক স্মৃতি। তবে এটাকে কেন্দ্র করেই আশুরা পালন কোনোভাবেই শরিয়ত সমর্থন করে না। হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত সত্যান্বেষী মুসলমানের জন্য প্রেরণা ও চেতনার মশাল। তিনি যে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জুলুম-দুঃশ্বাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন, সেটা মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয়। এ ঘটনা মুসলমানদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও সত্যের পথে সংগ্রাম করার চেতনায় উদ্ধুব্ধ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
এমএইউ/