ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

এ কেমন আতিথেয়তা?

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
এ কেমন আতিথেয়তা? ছবি: সংগৃহিত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরের বিশাল বিশাল আবাসিক ভবনের গেটে ‘অনুগ্রহ করে অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন’ সাইনবোর্ড দেখা যায়। শহুরের জীবনের বাস্তবতা ও নানা কারণে এমন রীতি চালু হয়েছে।

তবে এভাবে অতিথির গাড়ি বাইরে রাখতে বলাটা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে রীতিমতো অপমানজনক বলে অভিহিত করেছেন। অনেকেই যৌক্তিকতা, অপমানবোধ এড়িয়ে বলছেন, এটা হতে পারে না। কারণ, এতে জনসাধারণের চলাচলে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি তা হয় যানজটের কারণ।

বিষয় যাই হোক, অতিথির গাড়ি বাইরে রাখতে বলা মূলত সামন্তবাদী চিন্তাধারার বর্হিপ্রকাশ। এর ভেতর দিয়ে সমাজের কিছু মানুষের সামাজিক চরিত্র ও মানবিক দীনতাই কেবল প্রকাশ পায়। আর বিষয়টি এমনও নয় যে, ওই ভবনের মালিক কোথাও অতিথি হন না বা হবেন না। অতিথি হওয়া বা আসা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটা সমাজবদ্ধ জীবনের অংশবিশেষ। তাই অতিথিদের বিষয়ে এমন নির্দেশনা কাম্য নয়।

সব ধর্মে অতিথি বা মেহমানকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করার নির্দেশ রয়েছে। মানবতার ধর্ম ইসলামে অতিথি আপ্যায়ন সওয়াবের কাজ বলে বিবেচিত। যেসব ভালো গুণের সম্মিলন একজন মানুষকে সামাজিকভাবে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, অতিথিপরায়ণতা এর অন্যতম। এই গুণটির কারণে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন সময়ে কাফের-মুশরিকদের কাছেও সমাদৃত ছিলেন।

অতিথিপরায়ণতা, অতিথিকে সম্মান করা একজন মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদিসে মেহমানের সম্মানের বিষয়টিকে আল্লাহ এবং পরকালের ওপর ঈমান রাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে হাদিসে উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু শুরায়হ খুয়ালিদ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে হক আদায় করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) মেহমানের হক কী? তিনি বলেন, একদিন এক রাত, সর্বোচ্চ মেহমানদারি তিন দিন পর্যন্ত, এর অতিরিক্ত হলো সদকাস্বরূপ‍। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

কারো বাড়িতে যখন কেউ বেড়াতে আসে, তখন তাকে বলা হয় মেহমান। অপরদিকে বাড়ির অধিবাসীদের বলা হয় মেজবান। ইসলাম মেহমান-মেজবান উভয়কেই কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামের দাওয়াত খাওয়া ও খাওয়ানো দু’টিই সুন্নত। এক্ষেত্রে ইসলাম আন্তরিকতাপূর্ণ অনাড়ম্বর দাওয়াতের কথা বলেছে। দাওয়াত দিলে সাধ্যের বাইরে গিয়ে হলেও দামি খাবার খাওয়াতে হবে অথবা অবশ্যই উপহার নিয়ে যেতে হবে- এটা জরুরি নয়।  

অতিথি আপ্যায়ন উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য এবং উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করে। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অতিথিপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেক সময় মেহমানদারি করতে গিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে অনাহারে থাকতে হতো। মেহমানের কোনো অযত্ন যেন না হয় সেদিকে তিনি খেয়াল রাখতেন।

যে ঘরে মেহমানের আগমন বেশি হয়, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের বর্ষণ বেশি হয়। কারও এটা ভাবা উচিত নয় যে, মেহমান আসার কারণে অধিবাসীদের রিজিক কমে যায়। রিজিক কমে যায়নি বরং তাদের ভাগ্যে আল্লাহতাআলা সৃষ্টির আগেই এই রিজিক লিখে রেখেছিলেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যে ঘরে মেহমানের আগমন নেই; সে ঘরে ফেরেশতা আসে না। ’

আল্লাহতাআলা কোরআন করিমেও আতিথেয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। হজরত ইবরাহিমের (আ.) ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতাআলা তার আতিথেয়তার বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে বর্ণনা করে বলেছেন, অতিথি আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি যে কাজটি করেছেন তা হলো, সেখানে যে ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, তা অনুযায়ী মেহমানদের সামনে সুস্বাদু খাবার তিনি পরিবেশ করেছিলেন।

মহানবীর (সা.) প্রতি যখন প্রথম ওহি হলো এবং এর ফলে তার মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলো, তখন হজরত খাদিজা (রা.) মহানবীর (সা.) কথা শুনে তাৎক্ষণিক তার সেসব গুণাবলির কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, এমন গুণাবলির অধিকারীকে আল্লাহতায়ালা কীভাবে ধ্বংস করতে পারেন বা তার প্রতি কীভাবে অসন্তুষ্ট হতে পারেন? সেগুলোর মধ্য থেকে অতি উৎকৃষ্ট যে বৈশিষ্ট্য ও গুণের কথা বলেছিলেন তা হলো, মহানবীর (সা.) আতিথেয়তা।

মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের অতিথির যথাযথ প্রাপ্য প্রদান করো। মেহমানদের সেবা করা অবশ্য কর্তব্য। এটা আল্লাহতায়ালার আদেশ ও নবীর সুন্নত। ইসলামের ইতিহাস ও হাদিসে মেহমানদারী, খানার দাওয়াত দেওয়া, দাওয়াত গ্রহণ করা ও আপ্যায়নের বিষয়ে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। সবগুলোতেই অতিথির সম্মান, আরাম-আয়েশের বিষয়ে খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং আলোচ্য বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার করে দেখার অনুরোধ রইল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর  ১৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।