উদারতা প্রদর্শন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য। মুসলমান নিজের খাবার অন্যকে খাইয়ে প্রশান্তি লাভ করবে- এটা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ।
মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিমদের জান-মাল, ইজ্জত রক্ষা ও ন্যায়বিচারের জন্য কোরআন-হাদিসে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং দেশ থেকে তোমাদের বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদাচারণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। ’ -সূরা মুমতাহিনা: ৮
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- ‘কোনো ব্যক্তি (মুসলমান) যদি কোনো ইহুদি বা অগ্নিপূজককে ‘হে কাফের’ বলে সম্বোধন করে, আর এর দ্বারা তার মনে আঘাত লাগে, তাহলে ‘হে কাফের’ বলে সম্বোধনকারী ব্যক্তি গোনাহগার হবেন। -ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা- ৫৯
ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে ইসলাম উদার। ইসলাম কাউকে দ্বীন পালন করার ক্ষেত্রে বাধ্য করার অনুমতি প্রদান করে না। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধর্ম পালনে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। ’ -সূরা বাকারা: ২৫৬
মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিমের ধর্ম পালনে মুসলমানের যেমন কিছু করণীয় রয়েছে; তেমনি ইসলাম ধর্মের প্রতি অন্যদের আহ্বানের ক্ষেত্রেও কোরআনে সুন্দর নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আল্লাহর পথে আহ্বান করো এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে আলোচনা করো। ’ -সূরা নাহল: ১২৫
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের মধ্যমপন্থী দল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলাম উগ্রতার বিপরীতে উদারতার চর্চা করে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানবদলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের ওপর (পথ প্রদর্শনের) সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো। ’ -সূরা বাকারা: ১৪৩
যা কিছু মঙ্গল এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক- ইসলাম সেটাকে সমর্থন করে। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সমাজে শান্তি স্থাপনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তির বার্তা প্রদান করেছেন। মদিনার সনদ প্রনয়ণের মাধ্যমে মানবাধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।
কোরআনে কারিমে হয়েছে, ‘আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। ’ -সূরা আম্বিয়া: ১০৭
পবিত্র কোরআনে নবী করিমকে (সা.) শুধু মুসলমানের জন্য রহমতস্বরূপ বলা হয়নি। তাকে বিশ্ব জগতের জন্য রহমতস্বরূপ বলা হয়েছে। ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, অমুসলিমরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক নানাবিধ সমস্যা নিয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য নবীজীর নিকট আসতো। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সমস্যা শুনতেন এবং পরাশর্ম দিতেন। এমন উদারনৈতিক চিন্তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু মানুষের প্রতি উদার ছিলেন, তা নয়। তিনি পশু-পাখি, জীব-জন্তু, পরিবেশ থেকে শুরু করে, মাছ, গাছপালা সবার প্রতি উদার ছিলেন। সমাজে নিজের সম্পদ মানুষের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে তিনি উদারতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পাখির ছানাকে যথাস্থানে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, গৃহপালিত পশুর প্রতি দয়ার্দ্র আচরণের কথা বলেছেন। সুতরাং রাসূলের উম্মত হিসেবে, ইমানের দাবী মতে- আমাদেরও নবীর দেখানো উদারতার আদর্শকে ধারণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/