মানুষ মাত্রই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। পণ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানি, জমি-জমা ও ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়, নগদ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখা, ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব খোলা, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া, দোকান পজিশন ভাড়া দেওয়া-নেওয়া, জমি বন্ধক রাখা, নগদ অর্থ হাওলাত দেওয়া, হজ পালন কিংবা বিদেশ গমনের জন্য টাকা দেওয়া ইত্যাদি।
লেনদেনকে নিয়ে সমাজে অনেক অনাকাংখিত ঘটনা ঘটে। লেনদেনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির প্রেক্ষিতে পরস্পরে সৃষ্টি হয় শত্রুতা। কখনও লেনদেনকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবির মতো ঘটনাও ঘটে। হয় মামলা-মোকাদ্দমা।
মৌখিক কিংবা অলিখিত লেনদেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। লেনদেন পরবর্তী অনাকাংখিত পরিস্থিতি এড়াতে লেনদেন করার পূর্বে উপযুক্ত স্বাক্ষীর উপস্থিতে চুক্তিপত্র সম্পাদনের জন্য কোরআনে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন একে অপরের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্যে ঋণের চুক্তি করো তখন তা লিখে রাখো; তোমাদের মধ্যকার যে কোনো একজন লেখক সুবিচারের ভিত্তিতে (এ চুক্তিপত্র) লিখে দেবে, যাকে আল্লাহতায়ালা লেখা শিখিয়েছেন, সে যেন কখনও (চুক্তিপত্র) লিখতে অস্বীকৃতি না জানায়, ঋণগ্রহীতা বলে দেবে কি (শর্ত সেখানে) লেখতে হবে, (চুক্তিপত্রের) লেখক অবশ্যই তার প্রতিপালক মহান আল্লাহকে ভয় করে তা লেখবে, লেখককে (খেয়াল রাখতে হবে) তার কিছুই যেন বাদ না পড়ে; যদি সে ঋণগ্রহীতা অজ্ঞ মূর্খ এবং দুর্বল হয়, অথবা (চুক্তিনামার কথাবার্তা বলে দেওয়ার) ক্ষমতা তার না থাকে, তবে তার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক ন্যায়ানুগ পন্থায় বলে দেবে (চুক্তিপত্রে) কি কি কথা লেখতে হবে; তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন পুরুষকে সাক্ষী বানিয়ে নিয়ো; যদি দু’জন পুরুষ (একত্রে) পাওয়া না যায় তবে একজন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা (সাক্ষী হবে), যাতে করে তাদের একজন ভুলে গেলে দ্বিতীয়জন তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে; এমন সব লোকদের মধ্য থেকে সাক্ষী নিতে হবে যাদেরকে উভয়পক্ষই পছন্দ করবে, যখন (সাক্ষ্য প্রদানের জন্য) ডাকা হবে তখন তারা তা অস্বীকার করবে না; (লেনদেনের) পরিমাণ যত কম হোক কিংবা বড় হোক তার দিনক্ষণসহ (লিখে রাখতে) অবহেলা করবে না; এটা আল্লাহর নিকট ন্যায্যতার ও সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে অধিক মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং (পরবর্তীতে) যাতে তোমরা সন্ধিগ্ন না হও, তার সমাধানের জন্যেও এটা নিকটতর (উত্তমপন্থা), যা কিছু তোমরা নগদ (হাতে হাতে) আদান-প্রদান করো তা (সব সময়) না লিখলেও তোমাদের কোনো ক্ষতি নেই, কিন্তু ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় অবশ্যই সাক্ষী রাখবে, লেখক ও সাক্ষীদের কখনও (তাদের মত বদলানোর জন্যে) কষ্ট দেওয়া যাবে না; তারপরও তোমরা যদি তাদের এ ধরনের কষ্ট দাও তাহলে (জেনে রেখো) তা হবে (তোমাদের জন্যে) একটি মারাত্মক পাপ। ’ -সূরা আল বাকারা: ২৮২
মনে রাখা উচিত, কেউ যদি কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হয় । তাহলে চুক্তির শর্তগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। চুক্তিপত্রের শর্ত মেনে চলার জন্যে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা হুকুম দিয়েছেন। কারণ চুক্তিপত্রের শর্ত মানার মাধ্যমে পারস্পরিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সর্ম্পক মজবুত হয়। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। অনাকাংখিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের সঙ্গে তোমরা চুক্তি করেছ, তারা (চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে) এতটুকুও ত্রুটি করেনি- না তারা কখনও তোমাদের বিরুদ্ধে অন্য কাউকে সাহায্য করেছে, তাদের চুক্তি তাদের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই তোমরা মেনে চলবে। ’ -সূরা তওবা: ৪
সুতরাং আমাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও পারস্পরিক সর্ম্পক অটুট রাখার জন্যে লেনদেন করার পূর্বে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী চুক্তিপত্র সম্পাদন করা আবশ্যক। এ ছাড়া লিখিত চুক্তিপত্র থাকলে আইনের আশ্রয় নেওয়া যায়। যা মৌখিক কিংবা অলিখিত লেনদেনের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এমএইউ/