নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি বখাটেদের হামলা, উৎপাত, নির্যাতন ও সহিংসতা নতুন কিছু নয়। গ্রামগঞ্জে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, রাস্তাঘাটে বা বাড়ির আশপাশেই ঘটছে নানা উৎপাতের ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের অব্যাহত দৌরাত্ম্যে মেয়েদের লেখাপড়া, যাতায়াত, বিয়ে ও সাংসারিক জীবনসহ নির্বিঘ্নে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব বখাটের উপদ্রবে অনেক কিশোরী, তরুণী ও নারীকে প্রাণ দিতে হয়েছে, অনেকে হয়েছে এসিড-সন্ত্রাসের শিকার। উত্ত্যক্তকারীদের কবল থেকে বাঁচতে কেউ কেউ জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের মাতাপিতা হামলা, লাঞ্ছনা এমনকি হত্যাকান্ডেরও শিকার হয়েছেন। আইন আগের চেয়ে কঠোর হলেও বখাটেরা আগের মতো অবাধে ও বেপরোয়াভাবে মেয়েদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের ধস নামার সব পথ খোলা রয়ে গেছে।
এসব ঘটনা সমাজে আতংক ছড়াচ্ছে। তরুণরা ক্রমাগতভাবে এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। যা কোনোভাবে কাম্য নয়। আসলে হঠাৎ এসব ঘটনা ঘটছে এমন কিন্তু নয়। দীর্ঘদিনের সামাজিক অবক্ষয় ও পারিবারিক ভাঙনের কারণে এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়ে কর্মজীবনের পাশাপাশি সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন না। ফলে তারা বিভিন্ন খারাপ পরিবেশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। এভাবে সঙ্গদোষে ধীরে ধীরে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যা শুরু হয় ইভটিজিং ও মাদক গ্রহণের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে। এরপর একসময় তা বড় আকার ধারণ করে। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান হয়ে যায় বখাটে, সন্ত্রাসী, মাস্তান, দাঙ্গাবাজ প্রভৃতি।
এ জন্যই হাদিসে সৎ সঙ্গী নির্বাচনের জন্য অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়ত তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার সুঘ্রাণ তুমি পাবে। আর কামারের হাপরে ফুঁ দানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে নয় তার দুর্গন্ধ তো তুমি পাবেই। ’
আজকে যেসব বখাটের জন্য সমাজ কলুষিত তাদের মাঝে রয়েছে সুশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষার মারাত্মক অভাব। নৈতিক শিক্ষার আলো তাদের মাঝে থাকলে তারা এমন কাজ করতে পারত না। সে হিসেবে আমরা মনে করি, ইসলামি শিক্ষা তথা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব রোধ করা সম্ভব।
আমরা জানি, কিশোর অপরাধ বেড়েছে নানা কারণে। সেসব কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান নারী উত্যক্তের ঘটনা রোধে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী নির্যাতন তথা উত্যক্তকরণ, ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, অঙ্গহানী, সম্মানহানী, মিথ্যা অপবাদ প্রদান ইত্যাদি অপরাধের জন্য যে শাস্তির বিধান দিয়েছে, সে বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে।
বস্তুত ইভটিজিং বা নারী উক্ত্যক্তের যতো কারণ রয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- তরুণ ও যুবকদের নৈতিক পদস্খলন। তাই শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নৈতিক পতন রোধ করা সম্ভব নয়। এ সমস্যার সমাধান চাইলে অল্প বয়স থেকে সন্তানদের ধর্মের ভিত্তিতে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
নৈতিকতা বিধ্বংসী উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে সঙ্গে অল্প বয়সে সন্তানদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে এবং মুসলিম মনীষীদের জীবনীর সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। বিশেষভাবে ১০-১৫ বছর বয়সের মধ্যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও কোরআনে বর্ণিত অন্য নবীদের জীবনীসহ বিশিষ্ট সাহাবি এবং মনীষীদের জীবনী পড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা না থাকলে অভিভাবকদেরকেই সে উদ্যোগ নিতে হবে। মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে। এভাবে পবিত্র কোরআন-হাদিসের শিক্ষা জনমনে ছড়িয়ে দিতে পারলে এ ধরনের সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে- ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এমএইউ/