আফ্রিকার পূর্বভাগের দেশগুলোকে একত্রে পূর্ব আফ্রিকা বলা হয়। এ অঞ্চলের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন।
এমন সামাজিক বৈষম্য এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট বিষিয়ে তুলেছে এ অঞ্চলের মানুষদের। এ কারণে এ মহাদেশটি শিক্ষা ও নাগরিক উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে বেশ পিছিয়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকা। আর সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে এর প্রভাবটি আরও বেশি পড়েছে এই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর।
সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার মুসলমানেরা নানা রকম অবহেলার শিকার। যার কারণে যুগ যুগ ধরে তারা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পরিস্থিতির উত্তরণে চমৎকার কিছু উদ্যোগ লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকার মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এখানে গড়ে উঠেছে কিছু বিশ্বমানের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। পিছিয়ে থাকা মুসলমান তরুণরাও এটিকে গ্রহণ করেছে নিজেদের বদলে দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে।
এখানে গত দুই দশকে গড়ে উঠেছে অন্তত দশটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে তাঞ্জানিয়া ও উগান্ডা এ ক্ষেত্রে বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য অনুসরণীয় হয়ে উঠতে পারে।
তাঞ্জানিয়ায় রয়েছে চারটি উন্নতমানের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় এ দেশটির জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ মুসলিম।
শিক্ষায় অনগ্রসরতার কারণে মুসলমানরা দারুণভাবে বৈষম্যের শিকার। কিন্তু গত শতাব্দীর শেষ ভাগে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশটির মুসলিম তরুণদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে।
তাঞ্জানিয়ার আধা স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ জানজিবারেই রয়েছে এ রকম তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো- আল সুমাইত মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি, জানজিবার ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব জানজিবার।
এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় নগরী মোরোগোরোতে রয়েছে মুসলিম ইউনিভার্সিটি অব মোরোগোরো।
দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকার আরেকটি দেশ উগান্ডায় মুসলমান জনগোষ্ঠী ১৩ শতাংশ। দেশটির অনগ্রসর মুসলিম তরুণদের জন্য গড়ে উঠেছে তিনটি বিশ্বমানের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হলো- ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইন উগান্ডা, কামপালা ইউনিভার্সিটি ও কামপালা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের মাঝেও জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি প্রজেক্ট ইন সাউথ সুদান, মোজাম্বিকের মুসা বিন বাকি ইউনিভার্সিটি ও কেনিয়ার উম্মা ইউনিভার্সিটি নিজ নিজ অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে যুগোপযোগী অবদান রাখছে।
অমুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলোতে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিনিয়ত নানামুখী সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়। আফ্রিকার অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব এই উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতেও বিদ্যমান। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে প্রতিনিয়ত আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ও মানসম্পন্ন শিক্ষক সঙ্কটে ভুগছে এগুলো। তবে এ বিষয়গুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে এই দশটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এই উদ্যোগে তাদের পাশে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মুসলিম থট (আইআইআইটি)।
১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের কল্যাণকামী এ প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে সহযোগিতা করছে পূর্ব আফ্রিকার এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। গত বছর তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল সংগ্রহ ও পাঠক্রম প্রণয়নের ওপর একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালার আয়োজন করেছে, যাতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের মুসলিম শিক্ষাবিদরা।
-অন ইসলাম অনলাইন অবলম্বনে
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এমএইউ/