তওবা হলো অতীতের গোনাহের অনুশোচনা। ইবাদতসমূহের মধ্যে তওবা অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
তওবাকারীকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। ’ -সূরা আল বাকারা: ২২২
তওবা সম্পর্কে হাদিসেও প্রচুর বর্ণনা রয়েছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর নিকট তওবা করো, আমি দৈনিক একশ’ বার তার নিকট তওবা করি। ’ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ থেকে তওবা করে সে এমন হয়ে যায়, যেন তার কোনো পাপই নেই। ’
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ মাত্রই পাপী, আর পাপীদের মধ্যে তওবাকারীরাই উত্তম। অন্তরের সব পঙ্কিলতা ঝেড়ে বিশুদ্ধ মনে তওবাকারীকে আল্লাহতায়ালা জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধচিত্তে তওবা করো, তাহলে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকর্মসমূহ মিটিয়ে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। ’ -সূরা আত তাহরিম: ৮
আল্লাহতায়ালা তওবাকারীর তওবা কবুল করে তাকে শুধু পাপমুক্তই করেন না, বরং তার পাপকে পুণ্যে রূপান্তরিত করেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তবে তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহতায়ালা তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ’ -সূরা আল ফুরকান: ৭০
যাদের তওবা কবুল করা হয়
অজ্ঞতাবশত পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার পর যারা তওবা করে আল্লাহতায়ালা তাদের তওবা করে থাকেন। এ ছাড়া আরও যাদের তওবা কবুল করা হয় তারা হলো- যারা পাপকর্ম থেকে বিরত থেকে নিজেদের সংশোধন করে নেয়, ঈমান আনার পর সৎকর্ম সম্পাদন করে, না দেখেই আল্লাহতায়ালাকে ভয় করে, তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে স্বীয় জানমাল উৎসর্গ করে, আল্লাহর পথে দান-সদকা করে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যথাযথ অনুসরণ করে, মানুষের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়, সর্বদা সত্য ও সঠিক কথা বলে এবং যারা সব ধরনের কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।
যাদের তওবা কবুলযোগ্য নয়
এক. যারা শিরকে লিপ্ত হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তার শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এটা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ আল্লাহর শরিক করে সে এক মহাপাপ করে। ’ -সূরা আন নিসা: ৪৮
দুই. যাদের মধ্যে মুনাফিকের দোষ বিদ্যমান। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো অথবা না করো, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। ’ -সূরা আল মুনাফিকুন: ৬
তিন. যারা সীমালঙ্ঘন করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা কুফরি করেছে ও সীমালঙ্ঘন করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোনো পথও দেখাবেন না। ’ -সূরা আন নিসা: ১৬৮
চার. ঈমান আনার পরও যারা পুনঃ পুনঃ কুফরি করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরি করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরি করে। ’ (অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের নাম ঈমান, মুনাফিকরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য ‘ঈমান এনেছে’ বলে মুখে প্রকাশ করত, আবার সুযোগ সুবিধা পেলে সেটা অস্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করত না, আলোচ্য আয়াতে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) অতঃপর তাদের কুফরি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোনো পথে পরিচালিত করবেন না। ’ -সূরা আন নিসা: ১৩৭
পাঁচ. যারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা কুফরি করে ও আল্লাহর পথ হতে মানুষকে নিবৃত্ত করে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। ’ -সূরা মুহাম্মদ: ৩৪
তওবার দরজা কখন বন্ধ হবে
সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা রাতে নিজহাত প্রসারিত করেন- যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে; এবং দিনে তার হাত সম্প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবা করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে। ’ –সহিহ মুসলিম: ৩১/২৭৫৯
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
এমএইউ/