ফরজ নামাজের বাইরে রয়েছে আরও অনেক ধরনের নামাজ। যেমন- সুন্নত, ওয়াজিব, মোস্তাহাব, সুন্নতে মোয়াক্কাদা, সুন্নতে জায়েদা, চাশতের নামাজ, ইশরাকের নামাজ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তওবা, তাহাজ্জুদের নামাজ ও ইসতেখারার নামাজ ইত্যাদি।
তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ফরজ ছিল। উম্মতে মুহাম্মদির ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম।
তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো- এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি।
পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদের নামাজ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন- ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। ’ -সূরা আয যারিয়াত: ১৭-১৮
হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) সম্বোধন করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। ’ -সূরা আল ঈসরা: ৭৯
কোরআনে কারিমের সূরা আল ফোরকানের ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। ’
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষভাগে আল্লাহতায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৭
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি। ‘আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। -হাদিস নম্বর: ১১৬৭/২
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ন হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
শহরে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত এক হাদিস উল্লেখ করেন। ওই হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। -হাদিস নম্বর ১১৬০/২
তাহাজ্জুদের নামাজ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে। ওই সব বর্ণনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজ মর্যাদাকর। এই নামাজ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই পালন করা উচিত। এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন সহজ হয়। আর সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যখন দূরত্ব কমে যায়- তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি সহজেই পূরণ করেন। আল্লাহতায়ালা সবাইকে বেশি বেশি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এমএইউ/