ঢাকা: বাংলাদেশে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির পর (জানুয়ারিতে)।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পরে রিটের পক্ষের আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আদালতে বলেছি আমরা এ রিটটা শুনানি করতে চাই। আদালত একপর্যায়ে বলেছেন-এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অ্যাটর্নি জেনারেলকে শুনতে হবে। আদালত আরও বলেছেন-এটা দীর্ঘ শুনানি করতে হবে। আফটার ভ্যাকেশন করতে হবে। এরপর আদালত অবকাশকালীন ছুটির পর রাখেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী এ রিট করেছেন।
আবেদনে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন ২০০৬ এর ১৯ ও ২০ ধারা উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রচার বা সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, সেবাদানকারী কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেসব অনুষ্ঠান সম্প্রচার বা সঞ্চালন করতে পারবে না সেগুলো হলো-
(১) দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান;
(২) রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান;
(৩) হিংসাত্মক, সন্ত্রাস, বিদ্বেষ ও অপরাধসম্বলিত কোনো অনুষ্ঠান;
(৪) বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান;
(৫) জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থ হানিকর কোনো অনুষ্ঠান;
(৬) দেশের কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান;
(৭) দ্য সেন্সরশিপ অব ফিল্মস অ্যাক্ট, ১৯৬৩ বা এর অধীন প্রণীত বিধি বা নীতিমালার পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান;
(৮) অশালীন বা আক্রমণাত্মক কোনো রসিকতা, অঙ্গভঙ্গি, নৃত্যগীত, বিজ্ঞাপন, সংলাপ বা সাবটাইটেল সংবলিত কোনো অনুষ্ঠান;
(৯) নগ্নতা, নগ্ন ছায়াছবি, বস্ত্র উন্মোচন দৃশ্য, দেহ প্রদর্শন, অশোভন অঙ্গভঙ্গি, যৌনক্রিয়ার ইঙ্গিতসূচক বা প্রতীকী নাচ অথবা অশোভন দৃশ্য সংবলিত এমন কোনো অশ্লীল অনুষ্ঠান;
(১০) উচ্ছৃঙ্খলতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শিশু-কিশোর অপরাধ বা অপ-সংস্কৃতিকে আকর্ষণীয় ও উৎসাহিত করতে পারে বা শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কোনো অনুষ্ঠান
(১১) মূল তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা অক্ষুণ্ন না রেখে সম্প্রচারিত কোনো অনুষ্ঠান;
(১২) অন্য কোন আইনের মাধ্যমে বারিত বা সেন্সরকৃত ছায়াছবি বা কোনো অশ্লীল অনুষ্ঠান;
(১৩) বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন;
(১৪) সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্দেশে বিদেশি চ্যানেলের কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার।
জনস্বার্থে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের ক্ষমতা সংক্রান্ত ২০ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে, জনস্বার্থে যেকোনো কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিষিদ্ধ করতে পারবে।
আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া জানান, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল আইনের বিভিন্ন উপ-ধারা লঙ্ঘন করে চলেছে। এ জন্য তাদের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে রিট করা হয়েছে।
রিটে তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিকে বিবাদী করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪
ইএস/এসআই