ঢাকা: ফেসবুক মেসেঞ্জারে ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর একযোগে ঘর ছেড়েছিলেন ৯ তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে ৪জন পুরুষ ও ৫জন নারী।
সোমবার (০২ জানুয়ারি) রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘নবদিগন্তের পথে’ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘর ছেড়ে যাওয়া ৯জনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র্যাব।
কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া ৯জন হলেন- আবু বকর সিদ্দিক (১৯), ফয়সাল হোসেন (১৭), মো. ফারুক হোসেন (১৮), মো. আলিফ খান (১৭), মুফলিয়া আক্তার (১৮), তাজকিয়া তাবাসসুম (১৭), জান্নাতুল ফেরদৌস (১৭), রুনা আক্তার (১৮) এবং কানিজ ফাতিমা ইফতি (২১)।
অনুষ্ঠানে আলোর পথে ফিরে আসা ৯ তরুণ- তরুণীকে ফুলের শুভেচ্ছা ও বই উপহার দেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
এ সময় র্যাব ডিজি বলেন, যারা ফিরে এসেছেন তাদের জন্য শুভকামনা। সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন তারা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি, অপরারেশন) কামরুল হাসান বলেন, কিছু তরুণ-তরুণী ধর্মীয় ভুল ব্যাখায় ঘর ছেড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছে।
৯ তরুণ-তরুণীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাবার কাছে একজন সন্তান, স্বামীর কাছে স্ত্রী বা স্ত্রীর কাছে স্বামী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবিষয় মাথায় রেখে আমরা যদি পরিবারের কাছে থাকতাম তাহলে কখনও ভুল ধারণা থেকে বিপদগামী হতাম না।
এর আগে নিখোঁজের পর সংশ্লিষ্ট থানায় এসব ঘরছাড়াদের পরিবারের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রেক্ষিতে তল্লাশি চালায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৭ ও র্যাব-৮।
গত ২৫ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে চট্টগ্রামে তাদের সন্ধান পেয়ে র্যাবের হেফাজতে আনা হয়৷
জিজ্ঞাসাবাদে ৯ তরুণ-তরুণী তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং উগ্রবাদ ছেড়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান।
যেভাবে উগ্রবাদে উদ্ভুদ্ধ হয় ৯ তরুণ-তরুণী:
র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি দেখতেন তারা। সেসব ছবি, ভিডিওর লিংকগুলো নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করতেন।
তাদের একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাকিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন। যারা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতেন তাদের নিয়ে খোলা হয় ‘দুনিয়া কিয়ে মুসাফির’ নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ।
পরে কথিত ধর্মগুরুর প্ররোচনায় এসে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে তারা টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হয়। সেখানে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন তারা। বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও পোস্ট করতেন এবং বিভিন্ন লেখকের বই ডাউনলোড করে গ্রুপে দিতেন তারা।
পরে গ্রুপের এডমিন কথিত ধর্মগুরু দীক্ষা দেন, নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে হলে সব ফেৎনা থেকে দূরে সরে গিয়ে পাহাড়ি এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ধর্ম পালন করার নির্দেশ কোরআন ও হাদিসে আছে - এই মর্মে ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাদের ঘর ছেড়ে হিজরতে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হয়৷
এতে ওই টেলিগ্রাম গ্রুপের ৯ জন সদস্যই হিজরত করার বিষয়ে একমত পোষণ করে। তখন তারা গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ করে রাঙ্গামাটি পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ২৩ ডিসেম্বর তারা চট্টগ্রামের একটি স্থানে একত্রিত হয়। সেখান থেকে একই দিনে বাসে করে রাঙ্গামাটিতে যায় তারা। সেখানে হিজরতের জন্য নিরিবিলি কোনো স্থান খুঁজতে থাকেন৷ না পেয়ে তারা চট্টগ্রামে ফেরত আসে। পরদিন তারা সবাই বান্দরবান গিয়েও সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে ওই দিনই আবারও চট্টগ্রাম ফেরত আসে। এরইমধ্যে ৯জনের মধ্যে এক নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এসময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে তাদেরকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ