ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অবৈধ একটি ইটভাটার কারণে মেঘনা নদীর বাঁকে জেগে উঠেছে চর। এতে বদলে গেছে স্রোতের গতিপথ।
হাওর বেষ্টিত জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় চকবাজার, চাতলপাড় গ্রাম ও বিলেরপাড় গ্রামে চলছে ভয়াবহ এ নদীভাঙন। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে গ্রাম দুটির বহু বাড়িঘরসহ বাজারের দোকানপাট। ‘জোনাকী ব্রিকস ফিল্ড’ নামের অনুমোদনহীন এ ইটভাটাটি রয়েছে মেঘনা নদীর উত্তর পাড়ে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রাম সীমান্তে।
স্থানীয়রা এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ জানালেও এখনো বহাল তবিয়তে আছে অবৈধ ইটভাটাটি। উল্টো অভিযোগকারীদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা থেকে অপসারণের আদেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো চলছে পরিবেশ দূষণকারী চিমনিতে ইট পোড়ানোর কাজ! প্রতিনিয়ত অবৈধ এ ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত হচ্ছে গ্রামের পরিবেশ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটাটি মেঘনা নদীঘেঁষা। এর সামনের অংশ নতুন করে ভরাট করা হয়েছে বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন। যে কারণে নৌযানগুলোকে চাতলপাড় বাজার ঘেঁষে চলতে হয়। এতে বাজারে ফের ভাঙনের আশঙ্কা বেড়েছে। বিগত বর্ষা মৌসুমে বিলেরপাড় গ্রামের একটি মসজিদ ভবন ভেঙে গেছে, এ পর্যন্ত ২৫-৩০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় এক আদেশে জরিমানা করার পাশাপাশি ইটভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দেয়। ওই আদেশে ইটভাটাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত স্থানে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে) প্রতিষ্ঠিত বলে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আদেশের পর কিছুদিন ভাটাটি বন্ধ ছিল। এখন সেখানে পুরোদমে ইট তৈরি হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করায় স্থানীয়দের মামলাসহ ও নানাভাবে হয়রানির ভয় দেখানো হচ্ছে। মামলায় ৭ জনকে জেলও খাটতে হয়েছে।
নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহেন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ছেলেসহ আমাকে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। এ মামলায় প্রায় এক মাসের মতো জেল খাটতে হয়েছে। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখন ভয়ে কিছু বলতে পারছি না।
চাতলপাড়ের বাসিন্দা শেখ মহিউদ্দিন পিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ভাটাটি ইট দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে একটি চর জেগে উঠেছে। এ কারণে গত পাঁচ বছর ধরে আমাদের চকবাজারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ পানির নিচে চলে গেছে। এমনকি আমাদের গ্রামটি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইটভাটাটি বন্ধসহ নতুন জেগে ওঠা চরটি না কাটলে আমাদের জীবনযাপন করাই কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের সবার দাবি অবিলম্বেব এই অবৈধ ইটভাটাটি বন্ধ করা হোক।
মো. তৈয়ব হোসেন নামে এক ইউপি সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটার কারণে চাতলপাড় বাজারটি দিন দিন ভেঙে যাচ্ছে। চোখের সামনে দেখেছি মেঘনা নদীতে অনেক দোকান চলে যেতে। এছাড়া আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
তবে ভাটামালিক মো. জাহের মিয়া বলেন, আমার ইটভাটা নদী থেকে অনেক দূরে। চাতলপাড়ের মানুষ চায় এপারের নোয়াগাঁও গ্রামটিই চলে যাক। আমি অনুমোদন নিয়েই ইটভাটা পরিচালনা করছি।
কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ইটভাটার বিষয়ে আমরা গত বছর মনিটরিং এনফোর্সমেন্ট ফাইল পাঠিয়েছিলাম। সেখানে ইটভাটা বন্ধসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়। গত বছর ভাটাটি বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর আবার চালু করা হয়েছে। আমাকে লিগ্যাল নোটিশও দেওয়া হয়েছে। আমি এর জবাব দিয়েছি। জোনাকী নামের ওই ইটভাটাটি চালানোর কোনো অনুমোদন নেই, এটা বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
ভাঙন প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রজেক্ট দিয়েছিলাম। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে তৃতীয় পক্ষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রকল্প লাগে। ফিজিবিলিটি প্রকল্পটি পাস হয়েছে। এ বছর জুন মাসের মধ্যে যাচাই হবে। যাচাইয়ের আলোকেই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। এখানে শুধু চাতলপাড় নয়, মেঘনা তীরের বিভিন্ন পয়েন্ট রয়েছে।
ইটভাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো দেখবে তৃতীয় পক্ষ। তখন যদি বলা হয় ইটভাটার কারণে সমস্যা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
এসএ/এমএমজেড