ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাকরাইনে মেতেছিলেন পুরান ঢাকাবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
সাকরাইনে মেতেছিলেন পুরান ঢাকাবাসী শনিবার সাকরাইন উৎসবে মেতেছিলেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা -ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: পৌষের শেষ দিনে শনিবার(১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর পুরান ঢাকার দিগন্ত বিস্তৃত আকাশে সকাল থেকেই বৈচিত্র্যময় নকশাঁর বাহারি রঙের ঘুড়ির খেলা। ঘুড়ি নয় যেন নিজেদের স্বপ্নের বুননে মেতে ওঠেনপুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

হাতে নাটাই নিয়ে সুতার টানাটানিতে শীতের আকাশে এক ঘুড়ির সঙ্গে আরেক ঘুড়ির কাটাকাটির প্রতিযোগিতার পাশাপাশি রাতের আকাশে লেজার শো’ নান্দনিকতায় ঢেকে যায় রাজধানীর ওই এলাকা।

আকাশে ঘুড়ির খেলা, আর ঘরে ঘরে পিঠাপুলি, বিরিয়ানি, তেহারি, মোরগ পোলাও, বাকরখানি, দই মিষ্টিতে একে অন্যকে আপ্যায়ন আর এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে খাবার পাঠানোর মধ্য দিয়ে আপ্যায়নপ্রিয় বাসিন্দা হিসেবে ঢাকাইয়ারা আরও একবার নিজেদের ভোজনরসিক চরিত্রের প্রমাণ দিয়েছেন। উৎসবের এই আবহে নতুন রঙ ঢেলে দিয়েছে বাসাবাড়ির ছাদে ছাদে উচ্চ মাত্রার আওয়াজের সাউন্ডবক্সে গান।

রসনা বিলাসের পাশাপাশি হৃদয়কে প্রশান্ত করার সুরের খেলার পাশাপাশি রাজধানীর পুরান ঢাকার আকাশজুড়ে ঘুড়ির এঁকেবেঁকে চলা। পৌষকে বিদায় জানাতে তাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের ‘সাকরাইন’ উৎসবটি ছিল উচ্ছাসের, উল্লাসের, উন্মাদনার।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী শনিবার পৌষের শেষ দিন থাকলেও এদিন শীতের দাপট ছিল না বললেই চলে। চশমাদার, কাউটাদার, পঙ্খিরাজ, প্রজাপতি, চক্ষুদার, ঈগল, সাদা ঘুড়ি, চারবোয়া, দুই বোয়া, টেক্কা, লাভ ঘুড়ি, ৩ টেক্কা, মালাদার, দাবা ঘুড়ি, বাদুর, চিল, অ্যাংরি বার্ডস, চোকদার, মাসদার, গরুদান, লেজলম্বা, চারভুয়াদার, পানদার, লেনঠনদার, গায়েলসহ প্রায় ২৬ ধরনের ঘুড়ির বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও রঙের বর্ণিলতায় ভিন্ন রঙে সেজেছিল ঢাকার শাঁখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার, সূত্রাপুর, প্যারিদাস রোড, কাগজিটোলা, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, ধূপখোলা, ধলপুর, ধোলাইখাল, কলতাবাজার, রায়সাহেব বাজার এলাকার ছাদের উপরের বিস্তীর্ণ আকাশ। চিরায়ত ঐতিহ্যের এই উৎসবে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা আনন্দ আর উদ্দীপনায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। সাকরাইনের এমন দৃশ্যের শৈল্পিক চাদরে শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আবৃত ছিল রাজধানীর পুরান এলাকা।

ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের অন্যতম আয়োজক পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের আরেফিন সানজু বলেন, ঢাকার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে সাকরাইন। উৎসবকে আনন্দমুখর করে তোলার জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি শাহী খাবার ও ডিজে গানের ব্যবস্থাসহ সবধরনের আয়োজিন ছিল এবারের উৎসবে।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার বেশ কয়েকজন প্রবীন বাসিন্দা বিষয়টিকে একটু বেশি বাড়াবাড়িই মনে করছেন। তাদের মতে, সাকরাইনের মূল বিষয় হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানো ও ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠা। কিন্তু, বেশ কয়েক বছর ধরে ডিজেসহ সাউন্ডবক্সের উচ্চমাত্রার শব্দ শুধু সাকরাইনের ঐতিহ্যকেই নষ্ট করেনি, এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেন, ডিজে আর শব্দদূষণ বাদ দিয়ে সাকরাইন শুধু ঘুুড়ি ওড়ানো আর অতিথি আপ্যায়ানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক।

জুরাইনের তরুণী মুন্নী আক্তার বলেন, সাকরাইন আমরা আনন্দের সঙ্গেই উদযাপন করতে চাই। সেই ছোটবেলা থেকেই সেটা করে আসছি। কিন্,  মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে আমাদের উৎসবের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে নারিন্দার ফাহিমা হক টুম্পা বলেন, আমরা চাই উৎসবটা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। বর্তমান প্রজন্মের উঠতি তরুণ-তরুণীদের কারণে সাকরাইন তার নিজস্বতা হারাতে বসেছে। উৎসব যাতে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায় সেটাই আমাদের চাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এইচএমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।