ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভেজাল কীটনাশকে পুড়ল আলু চাষিদের কপাল!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
ভেজাল কীটনাশকে পুড়ল আলু চাষিদের কপাল!

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার অর্ধশত বিঘা জমির আলু ক্ষেত মরে গেছে। ভেজাল কীটনাশক স্প্রে করার কারণে এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ চাষিদের।

বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ক্ষতিপুরনসহ আইনি ব্যবস্থা নিতে দুই গ্রামের চাষিরা দলবদ্ধভাবে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর পৃথক দুইটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরেও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চাষিরা আলুসহ নানান সবজি চাষাবাদ করে সংসার চালান। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ করেন। প্রতি বছর আলুর বাম্পার ফলনে বেশ লাভবান হন এ অঞ্চলের চাষিরা। এ বছরও লাভের আশায় ব্যাপক হারে আলুর চাষ করেছেন তারা। আলুর চাষাবাদের সময় মতো বীজ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। মৌসুমের আলু ব্রীজসহ সারা বছরের জন্য রাখা হয় হিমাগারে।

মৌসুমের আলু আর কিছুদিন পরে সংরক্ষন শুরু করবেন এ অঞ্চলের চাষিরা। শীতের মাঝামাঝি সময় গাছ পচা রোগ থেকে আলু গাছ রক্ষায় চাষিরা কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন। এসব চাষিরা ফেয়ার এ্যাগ্রোকামিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলারদের পরামর্শে মেনকোজেব স্প্রে করেন।

কিন্তু কীটনাশক স্প্রে করার দুই দিন পর আলু গাছের পাতা পুড়ে মরে যেতে শুরু করে। ওই কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আবারও ওই কোম্পানির অন্য ওষুধ স্প্রে করেন তারা। কিন্তু কোনোভাবেই আলু ক্ষেত আর রক্ষা পায়নি। ওই কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ডিলারদের কাছে গেলেও তারা আর কোনো সহায়তা করেননি। পরে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার বড়াবাড়ি ও বড় কমলাবাড়ি গ্রামের চাষিরা দলবদ্ধ হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর পৃথক দুইটি অভিযোগ দেন। তাতে ক্ষতিপুরনসহ ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান চাষিরা।

উপজেলা সদরের বড়াবাড়ি গ্রামের আলু চাষি আফছার উদ্দিন বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আলু লাগিয়েছি। ফেয়ার এ্যাগ্রোকামিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের ডিলার লাবনী এন্টারপ্রাইজের প্রোভাইডার কামাল হোসেনের পরামর্শে মেনকোজেব স্প্রে করি। এর পরদিন আলু গাছ পুড়ে যায়। পরে পুনরায় তারই পরামর্শে আবারও ওষুধ স্প্রে করেও ক্ষেত রক্ষা করতে পারিনি। এখন কোম্পানির লোকজন টালবাহনা করছেন। প্যাকেটের গায়ে ১ হাজার ৮১ টাকা কেজি মুল্য লেখা থাকলেও বিক্রি করেন মাত্র ৭৫০ টাকা। আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমার প্রায় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

চাষি ছকমল হোসেন বলেন, খেয়ে না খেয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছি। মেনকোজেব স্প্রে করে সব মরে গেছে। গত বছর এ জমি থেকে ৮০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছি। এবারও লাখ টাকা বিক্রির স্বপ্ন পুড়ে গেলো ভেজাল ওষুধে। আমরা গরিব ও অশিক্ষিত চাষি। সরকার না জেনে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করা অনুমতি কেন দিল? এ ওষুধ স্প্রে করে তার গ্রামের ১৫-২০ জন চাষির কয়েক বিঘা আলুর ক্ষেত মরে গেছে। এর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।

চাষি এরশাদুল হক বলেন, কৃষি অফিসের লোকজন অভিযানের নামে মোটা অংকে টাকা নিয়ে এসব মানহীন ভেজাল ওষুধের অনুমোদন দেন। ওষুধগুলো বিক্রি হলে মোটা অংকের কমিশন পায় কৃষি বিভাগ, ডিলার ও কোম্পানির লোকজন। মরে যাচ্ছে শুধু গরিব চাষিরা। তাই অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কারণ, গরিব চাষি মরলেই কি আর বাঁচলেই কি!

একই উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আলু চাষি জয়নাল আবেদিন বলেন, শুধু মাত্র মেনকোজেব স্প্রে করার দুই দিন পরেই নিজের ১২ বিঘাসহ এ গ্রামের প্রায় ৪০ বিঘা জমির আলু ক্ষেত পুড়ে মরে গেছে। আমি মরা ক্ষেতের নমুনাসহ কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু কৃষি বিভাগ কোনো কর্ণপাতই করছে না। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছর বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষাবাদ করেই চলে সংসার। এ বছর উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, বাড়িতে খাওয়ার জন্য আলুটুকুও পেলাম না। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ফেয়ার এ্যাগ্রোকেমিক্যালসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, মাঠকর্মীদের তদন্তে চাষিদের লিখিত দুই অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তবে আমার কিছুই করার নেই। যে ওষুধে চাষিরা ক্ষতির কথা বলেছেন তার রেজিস্ট্রেশন ও বাজারজাতের অনুমতি আছে। এ কারণে কোম্পানির বিরুদ্ধে আমার কিছু করার নেই। খুব বেশি হলে অভিযোগটি ওপরমহলে পাঠাতে পারবো। চাষিরা চাইলে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। কিন্তু আমি সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবো না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।