ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নতুন রাজস্ব ভবনের ভৌত অবকাঠামোর কৃতিত্ব গণপূর্তের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
নতুন রাজস্ব ভবনের ভৌত অবকাঠামোর কৃতিত্ব গণপূর্তের

ঢাকা: ‘তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’ কবিতার এমন যাতনার মতোই ৩০টি বছর রাজস্ব কর্মকর্তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে নিজস্ব ভবন পেতে। চোখের পানির কথা দিয়ে শুরু করলেও সুখবর হচ্ছে দীর্ঘ ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।

রাষ্ট্রের যে সংস্থা জাতীয় বাজেটের ৭৫ থেকে ৮৫  শতাংশ পর্যন্ত অর্থের যোগান দেয়, সেই সংস্থার নিজস্ব ভবনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে।

ওই বছরই প্রথম রাজস্ব ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুরু হয় জমি সংক্রান্ত মামলার জটিলতা। এই জমিতে ভবন হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। এর মধ্যে পার হয়ে যায় ১০ বছর। শুরু হয় নতুন জটিলতা, তা কাটিয়ে উঠে ২০০২ সালে জমি বরাদ্দ পেলেও বুঝে পেতে বিলম্ব হয় ছয় বছর।

২০০৮ সালে পাঁচ বছর মেয়াদে ১৪১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয় একনেকে। জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে ২০১৪ সালে সেই প্লট বুঝে পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জমি হাতে পেতে না পেতেই প্রথম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

তখনই কাজ করার সুযোগ পায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রথম প্রকল্প ভবনের নকশা পরির্তন করে পরিসর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১ কোটি টাকা। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা হয়।

এর মাঝেও আসে নতুন জটিলতা, ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল প্রথম প্রকল্পে। কিন্তু সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন ছাড়াই ৩০ তলা ভিত্তির ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

এর মধ্যে আবার বিপত্তি বাঁধে সরকারি দুই দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তা নেয়নি এনবিআর। এ নিয়ে সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০ তলা না করে ১২ তলা ভবন করতে হবে। কেননা বিমানবন্দর কাছাকাছি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২ তলার ভৌত অবকাঠমোর কাজ সম্পন্ন করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্তের শীর্ষ পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ধীর লয়ে চলতে থাকা ভৌত অবকাঠামোর কাজ দ্রুত শেষ করার কর্মপরিকল্পনা জানালেন তিনি। নিজের অফিসে আলাপকালে শামীম আখতার বলেন, রাজস্ব ভবন আমি এসে যেভাবে পেলাম; প্ল্যান করলাম বার বার স্থবিরতা থেকে বের হতে হবে, অন্তত ভৌত অবকাঠামোগত জায়গায় যেন দীর্ঘ না হয়। আর মনে মনে ভাবছিলাম, কাজটা শেষ করে ফেলতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের সুযোগটাও আসবে। আমি সৌভাগ্যবান এবং সাথে সাথে গণপূর্ত অধিদপ্তরও, আধুনিক বাংলাদেশের আগামীর রূপরেখায় কিছুটা কাজ আমিও করতে পেরেছি। তবে আমরা পেছনের মানুষ, সামনে থেকে নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী।  

২০২০ থেকে ২০২২ শেষ হয় সব কাজ। বাংলাদেশের আধুনিক রাজস্ব ভবনের নির্মাণ শেষে গত ২৯ জানুয়ারি এনবিআরের নবনির্মিত রাজস্ব ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর।

ভবনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধাসংবলিত। ভবনের মোট আয়তন ৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্টের আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থতলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩
পিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।