ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তামাকপণ্যের কর বাড়াতে ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের অনুরোধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
তামাকপণ্যের কর বাড়াতে ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের অনুরোধ

ঢাকা: জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও তামাকজাত দ্রব্যের কর বাড়ানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ জন চিকিৎসক।  

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করে।

বিবৃতি প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোম, অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান চৌধুরী, পরিচালক, মেডিকেল সার্ভিসেস ও বিভাগীয় প্রধান রেডিয়েশন অনকোলজি, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিওথেরাপি, স্কয়ার হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. এ এম এম শরিফুল আলম, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ক্লিনিক্যাল অনকোলজি, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতাল প্রমুখ।  

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে এক যৌথ বিবৃতিতে ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা ও সাদাপাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালিতে ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারো অজানা নয়।  

গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গ্যাটস) রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।  

তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে।  

এমতাবস্থায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০-২১ সালের তুলনায় ২০২১-২২ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। অথচ এ সময়ে বেশিরভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে বর্তমানে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এজন্য করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সর্বোপরি জনস্বার্থে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ এবং তামাকের করবৃদ্ধি জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল বিধায় তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা কমাতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে সিগারেট খুবই সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ধূমপায়ীরা তুলনামূলক কমদামী সিগারেট বেছে নিতে পারছে।  তাই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরো শক্তিশালী করে প্রণয়ন এবং করবৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করা আশু জরুরি বলে তাঁরা অভিমত দেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের’ ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরো কঠোর করা ও বিদ্যমান তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামোর সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলেও তারা বিবৃতিতে জানান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৩
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।