মানিকগঞ্জ: ঢাকার শ্যামলী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে ডিপ্লোমা ও পরে রাজধানী ইউ.এস.এ থেকে ডি.ও.এল.ভি (চক্ষু) বিষয়ে এক বছরের একটি কোর্স করেই চক্ষু ডাক্তার বনে গেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে জেলার ঘিওর উপজেলার মাসুদ রানা ছবেদ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফ্রি চক্ষু ক্যাম্পেইন করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন কথিত এ চক্ষু ডাক্তার।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ঘিওর উপজেলার সিনজুরী এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে এসএসসি পাশ করে রাজধানী ঢাকার একটি প্রাইভেট কলেজে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমাতে ভর্তি হন মো. ছবেদ। ডিপ্লোমা শেষ করে বরিশালে সন্ধানী চক্ষু হাসপাতাল চাকরি শুরু করেন তিনি। এরপর চাঁদপুর, সিলেট ও সর্বশেষ ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চক্ষু ক্যাম্পেইনের কাজ করেছেন ছবেদ। উপার্জন ভালো হওয়াতে চোখের ওপর এক বছরের একটি সর্ট কোর্স করেই নিজেই চিকিৎসক হয়ে গেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ চক্ষু চিকিৎসক রোগী দেখার পাশাপাশি ডিজিটাল মেশিন দিয়ে চোখের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং ব্যবস্থাপত্রও লিখেন। আবার তিনি নিজেই চশমার পাওয়ার সংযোজন করেন।
বাংলানিউজের এই প্রতিবেদক নিজেই রোগী হয়ে যান ডা. মাসুদ রানা ছবেদের চেম্বারে। ডাক্তার ছবেদ রোগীর নাম, বয়স, গ্রাম লিখার পর কি কি সমস্যা হয় চোখে বলেই চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতো করে ব্যবস্থাপত্রে লিখতে থাকেন একের পর এক ঔষধের নাম। সব কিছু বলার পর প্রথমে একটি মেশিনে প্রতিবেদকের চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করেন, তারপর আরও একটি মেশিনে নিয়ে চোখের লো-ভিশন পরীক্ষা করেন।
প্রতিবেদককে একটি প্লাস্টিকের টুলে বসিয়ে চোখে পড়ান পাওয়ার ফ্রেম এবং একের পর এক লেন্স পরিবর্তন করে একটি নির্দিষ্ট পাওয়ার দেন ওই চক্ষু ডাক্তার ছবেদ। রোগী দেখার সব ফর্মালিটি পর যখন ওই চক্ষু ডাক্তার বুঝতে পারেন, আসলে তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে; তখনই তিনি তার এক পরিচিত সাংবাদিককে ফোন ধরিয়ে দেন। ওই ফোনের অপরপাশ থেকে জনৈক ওই সাংবাদিক বলেন ছবেদ তার পরিচিত এবং বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন।
উপজেলার ঘিওর বাজারে সমবায় সমিতি মার্কেটের দুই রুম নিয়ে চক্ষু ডাক্তার সেজে গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন ছবেদ এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। মো. ছবেদ নামটি তার বি.এম.ডি.সি রেজিস্ট্রেশনে দেখা গেলেও রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেখা মিলল ডা. মাসুদ রানা ছবেদ নামটি।
আমজাদ বেপারী নামের এক বৃদ্ধ বলেন, আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। কে আসল ডাক্তার আর কে ভুয়া তা তো আর বোঝার উপায় নাই। মানুষের কাছে শুনি মাসুদ রানা ছবেদ অনেক ভালো, সেই জন্য এখানে আসছি।
নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, একজন চক্ষু ডাক্তার হতে গেলে সরকারি কিংবা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে আসতে হবে। তারপর বিএমডিসির সনদ থাকতে হবে। তবে এই মাসুদ রানা ছবেদ এসএসসি পাশ করে ডিপ্লোমা সম্পূর্ণ করেন। তারপর চোখের ওপর এক বছরের একটি শর্ট কোর্স করেই তিনি এ অঞ্চলে রোগী দেখা শুরু করে দিয়েছেন।
অভিযুক্ত ডা. মাসুদ রানা ছবেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি আগে কয়েকটি স্থানে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করেছি। পরে এক বছরের একটি কোর্স (চোখে ওপর) করেই চক্ষু চিকিৎসা শুরু করি। কারণ চাকরি করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে হতো না। আপনি রোগী দেখতে পারেন কি-না কিংবা ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ লিখতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর তিনি দিতে পারেন নি।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিলে স্পষ্ট করে বলা আছে, এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া কেউ নামের পাশে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। যদি কেউ প্র্যাকটিস করতে চায়, সেটাও অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এর বাহিরে কেউ ভুয়া ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ১৬ মার্চ, ২০২৩
এসআইএ